ওয়াশিংটন: মহাশূন্যে মানুষ পাঠানোর কৃতিত্বে আমেরিকার চেয়ে রাশিয়া-ই এগিয়ে রইল। মহাকাশ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মত, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মনুষ্যবাহী প্রথম সফল মহাকাশ যাত্রার ৫০ বছর পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াকে অগ্রভাগে রেখেই মার্কিন মহাকাশযান প্রকল্প সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
জুনের শেষের দিকে সর্বশেষ মার্কিন মহাকাশ যাত্রার পর মহাকাশচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ফিরিয়ে আনতে নতুন শাটল প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত নাসাকে রাশিয়ার সয়ুজ ক্যাপসুলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এতে তাদের প্রতি আসনের জন্য খরচ পড়বে ৫ কোটি মার্কিন ডলার।
মহাকাশযান এনডেভার-এর সর্বশেষ মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবে এপ্রিলের শেষের দিকে। পরবর্তী যান আটলান্টিস যাত্রা করবে জুনে। সর্বশেষ ডিসকভারির মিশনের সমাপ্তি ঘটে মার্চে।
এ অবস্থায় নাসার ৩০ বছর মেয়াদি মহাকাশ প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ ২০১৫ সালের আগে আশা করা যাচ্ছে না। তবে নাসার প্রধান প্রকৌশলী বলছেন, এর জন্য এক দশকও লেগে যেতে পারে।
এদিকে, আমেরিকার পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশ যাত্রা বাণিজ্যিকভাবে শুরু করার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বয়ং মার্কিন সরকারও উৎসাহ দিচ্ছে। তারা চান নাসার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে ব্যক্তিমালিকানার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অর্থে নতুন মহাকাশযান তৈরি করা হোক।
১৯৮১ সালে প্রথম মহাকাশ যাত্রার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র এবার ভবিষ্যতে মানুষের মহাকাশ ভ্রমণের কথা চিন্তা করছে। কোনো কোনো আমেরিকান আবার এমন প্রচারিভযান চালাচ্ছেন, ১৯৬৯ সালে আমেরিকানরাই প্রথম চাঁদের মাটিতে হেঁটেছে- তারা আবার সেখানে যাবে। অনেকে আবার মঙ্গল বা এমন অন্য গ্রহে ভ্রমণের ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছে।
তবে এসব উদ্দীপনায় জল ঢেলেছেন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস পলিসি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক জন লজডোন। তিনি বলছেন, মহাকাশে মনুষ্যবাহী যান পাঠানোর ভবিষ্যত ১৯৬১ সালে যেমন অনিশ্চিত ছিল আজও সে রকমই রয়ে গেছে।
সে সময় কংগ্রেস নাসার অর্থায়ণে বাধা প্রদান করেছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি চন্দ্র জয়ের উদ্দেশ্যে অ্যাপোলো প্রকল্প তখনো ঘোষণা করেননি।
ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ যাত্রা এ ক্ষেত্রে অ্যাপোলো প্রকল্পের জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তী যাত্রা এভাবেই শুরু হয়। এভাবেই মার্কিনিদের মহাকাশ যাত্রার ইতিহাস ব্যাখ্যা করলেন লজডোন।
তিনি বলেন, এখন, ‘৫০ বছর পরেও আমাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। প্রকৃতপক্ষে কেনেডির এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের কারণ ছিল গ্যাগারিনের মহাকাশ ভ্রমণ। এটি ছিল সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ব্যাপার। টাকার জন্য এটা ছিল একটি বড় প্রণোদনা। ’
নাসা ইতিহাসবিদ স্টিফেন গারবার বলেন, ‘এখনকার মতো ষাটের দশকেও অর্থায়ণ ছিল সবচেয়ে বড় ইস্যু। কংগ্রেস ও কেনেডির আশঙ্কা ছিল অ্যাপোলো খুবই ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প হবে। ’
সেই সময় এ প্রকল্পের জন্য নাসার দশ বছরের জন্য বাজেট ধরা হয়েছিল বর্তমান বাজারে ১৫০ বিলিয়ন ডলার। যা সে সময়ের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ এবং বর্তমানের দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ বর্তমানে নাসার বাৎসরিক বাজেট মাত্র ১৮ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মহাকাশ গবেষণা খাতে বাজেট ঘাটতিতেই ভুগছে না সোভিয়েতের সঙ্গে সেই শীতল যুদ্ধেরও অবসান ঘটেছে। সুতরাং চাপ সৃষ্টির বিষয়টিও আর নেই।
তিনি বলেন, ‘আজকাল অনেকে মনে করছেন চীন এখন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমি মনে করি না বিষয়টি আগের মতোই রয়েছে। ’ গারবার বলেন, বর্তমান মার্কিন মহাকাশ কৌশল খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
লজডোন তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রকল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো ভবিষ্যতের জন্য লক্ষ্য স্থির করতে একমত হওয়া।
‘কৌশল নির্ধারণে আরো আলোচনার দরকার রয়েছে, তা না হলে আমরা বড় ধরনের হোঁচট খাব’, বললেন গারবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১১