ঢাকা: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও সমাজতন্ত্রের শোচনীয় মৃত্যুর জন্য যে ব্যক্তিকে দায়ী করা হয় সেই স্তালিন মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে মস্তিষ্কের অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি বিভ্রান্ত ও বেপরোয়া একনায়ক শাসকে পরিণত হন।
তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের এ স্বৈরাচারের জীবনের শেষ বছরগুলিতে যেসব সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, সবই তার বিকারগ্রস্ত অবস্থায়। তিনি ভাল-মন্দের বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি অ্যাথারোসক্লেরোসিস নামক রোগে ভুগছিলেন। এ রোগে মস্তিষ্কের শিরায় চর্বি জাতীয় বস্তু জমে যায়। আর এ সমস্যাই তাকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়। জোসেফ স্তালিনের মৃত্যু হয় ১৯৫৩ সালে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, স্তালিন যখন মৃত্যুশয্যায় তখন ড. মিয়াসনিকভকে ডাকা হয়েছিল। পরে তিনি লেখেন স্তালিন বহুদিন ধরেই এ সমস্যায় ভুগছিলেন।
তিনি লেখেন, মস্তিষ্কের সমস্যার কারণে স্তালিন ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল, নৈতিক-অনৈতিক এবং বন্ধু-শত্রুর ভেদবুদ্ধি হারিয়ে থাকতে পারেন। এতে অতিমাত্রায় সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ায় তিনি ভ্রমগ্রস্ত (প্যারানয়েড) ব্যক্তিতে পরিণত হন।
লেখকের ধারণা, স্তালিনের নিষ্ঠুরতা এবং সন্দেহপ্রবণতার সৃষ্টি হয়েছে তার অতিমাত্রায় শত্রুভীতির কারণে। তার এ মানসিক বৈকল্যের ভোগান্তি গেছে পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর দিয়ে।
স্তালিনের গোপন পুলিশ বাহিনী এনকেভিডির প্রধান লাভরেনতি বেরিয়ার ডায়েরি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে তিনি লিখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে ব্রিটেন-সোভিয়েত এক অস্বস্তিকর জোট বাঁধতে বাধ্য হয়। মস্কোতে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল কীভাবে স্তালিনের সঙ্গে মদ্যপানে মেতে উঠতেন তার বর্ণনাও তিনি দিয়েছেন।
সোভিয়েত রাশিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহের দেয়ালটি বেশ শক্তই ছিল। বেরিয়া দাবি করেন, ১৯৪২ সালের আগস্টে স্তালিনের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য একবার চার্চিল মাতাল হয়ে গিয়েছিলেন।
তার ভাষায়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্তালিনের মতো একজন স্বৈরাচারের সুসম্পর্ক গড়তে এবং কোনো বিষয়ে তার সম্মতি নিতে সুরাই ছিল সবচেয়ে ভাল উপায়।
১৯৩৮ সালে এসকেভিডির উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর বেরিয়া স্তালিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্টদের একজন হয়ে উঠেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১১