ঢাকা: ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে সে অভিযানের আদ্যোপান্ত জানিয়ে রিপোর্ট হয়েছে।
সমুদ্র তলদেশে ডুবিয়ে দেওয়ার আগে পৃথিবীর বুকে ওসামা বিন লাদেনের শেষ শয্যা পাতা হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস কার্ল ভিনসনের ডেকে।
এবিসি নিউজ বলছে, পেন্টাগন থেকে তাদের জানানো হয়েছে বিন লাদেনের মরদেহর সমুদ্রযাত্রায় কার্ল ভিনসনকেই ব্যবহার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত মহাসাগরের গভীর তলদেশে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে মরদেহটি। তবে ৩০ বছরের বিমানবাহী রণতরী কার্ল ভিনসনের পক্ষ থেকে এ খবর অস্বীকার করা হয়েছে।
ইসলামে মুসলমানের মরদেহ মাটিতে দাফনের রীতি রয়েছে এবং তা অবশ্যই মৃত্যুর পরবর্তী ৫ ওয়াক্ত নামাজ শেষ হওয়ার মধ্যে। এ অবস্থায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় মাটিতে ওসামা বিন লাদেনের দাফন হবে ঝুঁকিপূর্ণ, বরং তার মরদেহ সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়াই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
কর্তৃপক্ষ বলছে ইসলামী আইন মেনে একজন মুসলিম নাবিককে দিয়েই বিন লাদেনের মরদেহ সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে তিনি কিছু দোয়া পড়েন এবং ইসলামী রীতি মেনে গোসল করিয়ে যথাযথ কাপড় দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে দেন।
ওসামা বিন লাদেনের মরদেহটি যে তারই তার প্রমাণে সমাধির আগে আফগানিস্তানে ডিএনএ টেস্ট করা হয়। আর টেস্ট সম্পন্ন করার পরই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মৃত্যুর খবরের ঘোষণা দেন বারাক ওবামা।
এদিকে, লাদেনের আবোটাবাদের বাড়িটিতে যা কিছু ঘটেছে সে সম্পর্কে আরও তথ্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন মিডিয়ায় সেখবর প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, আবোটাবাদে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বাস করছিলেন বিন লাদেন। আমেরিকান সেনারা তার আস্তানায় হামলা চালানোর পরপরই বাড়ি থেকেও পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এ সময় তার স্ত্রীর পায়েও গুলি লাগে।
আহত স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ওসামা দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান এবং রক্ষীদের সঙ্গে তিনিও গুলি চালাতে থাকেন।
লাদেনের ১০ বছর বয়সী মেয়ে সাফিয়াকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, মার্কিন সেনারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে তার বাবার মৃতদেহ নিয়ে গেছে। এটা সে দেখেছে।
সাফিয়া বলেছে, ‘মার্কিন সেনারা আমার বাবার লাশ সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ’
এবিসি নিউজ একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে বিন লাদেনের বাড়িটির ভিতরের কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। এতে রক্তমাখা মেঝে, বিক্ষিপ্তভাবে এলোমেলো বিছানা দেখানো হয়েছে।
তবে লাদেনের মরদেহের কোনো ছবি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি যে বানোয়াট তার প্রমাণ তুলে ধরে খবর হয়েছে। এ অবস্থায় কথা উঠেছে, খোদ মার্কিন মুলুকেই। বলা হচ্ছে, ছবি প্রকাশ করা না হলে এসব প্রশ্ন থেকেই যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের চেয়ারম্যান সিনেটর জোসেফ লিবারম্যান বলেছেন, আল-কায়দার পক্ষ থেকে যদি নিশ্চিত করা না হয় যে তাদের নেতা নিহত হয়েছে, তাহলে তার প্রমাণ ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
রিপাবলিকান সিনেটর সুজান কলিন্স বলেছেন, লাদেনের মৌলবাদী অনেক সমর্থক যেকোনো সময় দাবি করে বসতে পারে যে তাদের নেতা জীবিত । এবং এমন দাবি যাতে কখনোই না ওঠে তার জন্য কিছু ছবি প্রকাশ করা জরুরি।
বিন লাদেনের মৃত্যুর খবরের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার মরদেহর যে ছবিটি প্রচার করা হয় সেটিকে ভূয়া দাবি করে পাকিস্তানি টেলিভিশনে খবর প্রচারের পর এসব আলোচনা জোরদার হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন অনলাইনের ছবিতে নিতান্তই কৌশলের অংশ উল্লেখ করে মন্তব্য আসতে থাকে। বলা হয়, এর আগেও ২০০৯ সালে একই ছবি প্রচার করা হয়েছিলো।
ছবিটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিন লাদেনের গুলিবিদ্ধ মাথার ছবি হিসেবে দেখানো হয়েছে যেটি মূলত ১৯৯৮ সালে তোলা। রয়টার্স-এর খবরেও এ কথা বলা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে এবং অন্যান্য বিবেচনা থেকে এখনই অনেক কিছু করা সম্ভব নয়।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সন্ত্রাসবিরোধী উপদেষ্টা জন ব্রেনান বলেন, যথেষ্ঠ তথ্য প্রমাণই হাজির করা হয়েছে। একই সঙ্গে জানাতে চাই, আমরা এমন কিছু করতে যাচ্ছি না, যা কিনা পরে আমাদের এ ধরনের কোনো অভিযানের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মৃতদেহের ছবি প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো অনেক কিছু চূড়ান্ত করার বাকি রয়েছে। তবে একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, বিরোধীরা ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণে তাদের পক্ষে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই চালাবে।
টুইটারে ম্যারি গ্লেজার নামে একজন তার মন্তব্যে বলেন, ‘নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করছি না। ’
পেন স্টেড ইউনিভার্সিটির ছাত্র এরিক সোলোকার বলেন, ‘চোখে দেখার মতো কিছু একটা চাই। ফটোশপে আপনি যে কোনো কিছুই করতে পারেন। আমি বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু কিভাবে করবো তা জানিনা। ’
বাংলাদেশ সময় ১৪২৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১১