লন্ডন: সমাজতান্ত্রিক দেশ উত্তর কোরিয়ার সরকারের হাতে রয়েছে প্রায় ২ লাখ রাজনৈতিক বন্দি। বন্দিদের দাসদের মতো কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
এ মানবাধিকার গ্রুপটি সম্প্রতি উপগ্রহ থেকে তোলা এমন চারটি বন্দিশালার ছবি প্রকাশ করেছে। এগুলো দেশটির হ্যামকাইয়ুং প্রদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল এবং পিয়ংগান প্রদেশের দক্ষিণে গভীর জঙ্গলে অবস্থিত।
২০০১ সালের চিত্রের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বন্দিশিবিরগুলোর পরিধি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ানো হয়েছে। এসব বন্দিশিবির ১৯৫০এর দশক থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।
এর আগের রাজনৈতিক বন্দিশিবির ইয়োদকের বন্দি এবং একাধিক শিবিরের নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে অ্যামনেস্টি জানতে পেরেছে, ক্যাম্পগুলোতে খাদ্যাভাব চরমে উঠেছে। জীবন বাঁচাতে অনেক বন্দি ইঁদুর অথবা পশু-পাখির আধখাওয়া ফল ও শস্যদানা খেয়ে জীবনধারণ করছে।
এসব বন্দিশিবির বন্ধ করে দিতে বিশ্বের অন্যতম গোপনীয়তা রক্ষাকারী দেশ উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
সংস্থাটির এশিয়ার প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক স্যাম জারিফি এক বিবৃতিতে জানান, উত্তর কোরিয়া এ বিষয়টি আর কোনো ভাবেই অস্বীকার করতে পারে না। গত কয়েক দশক ধরে দেশটি বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক বন্দিদের এভাবে আটক রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
দেশটির নেতা কিম জং ইলের ছেলে কিম জং উনের ক্ষমতা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি এখন চিন্তার বিষয় যে, দেশটি যতোই নতুন নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বন্দি শিবিরগুলোর পরিধি ততোই বাড়ছে।
এর আগের বন্দি শিবির ইয়োদকের একজন সাবেক বন্দি জানান, ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার সঙ্গে বন্দিদের ৪০ শতাংশ মারা গেছে অপুষ্টির কারণে।
জিয়োং কিয়োংগিল যিনি ইয়োদক বন্দিশিবিরে ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন। তিনি জানান, বন্দিদের ভোর ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এর মধ্যে দুইবার খাবারের বিরতি থাকে। খেতে দেওয়া হত শস্যের স্যুপ। তারপর রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আদর্শ শিক্ষা দেওয়া হত। যদি কেউ নৈতিকতার ১০টি ধারা মুখস্ত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে ঘুমোতে দেওয়া হতো না।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বন্দিদের অনেককে শুধু সন্দেহের বশে আটক রাখা হয়েছে। এদের কোনো নিকটাত্মীয়র বিরুদ্ধে অভিযোগের সূত্রে তাকে ধরে আনা হয়েছে।
নিয়মভাঙলে বন্দিকে নির্যাতন কক্ষে কমপক্ষে এক সপ্তাহ আটকে রাখা হয়। কক্ষটি এতোটাই ছোট যে এখানে দাঁড়ানো বা শোয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১১