ঢাকা: বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী আল কায়েদাপ্রধান ওসামা বিন লাদেন এখন মৃত। মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সন্দেহ তিনিই নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা সংগঠিত করেন।
তার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে সহিংসতা কমবে নাকি বাড়বে তা অনুমান করা কঠিন। তবে এতে একটি বিষয় পরিষ্কার, এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী দৌড়ে বারাক ওবামা ও তার বিরোধীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর সেই লড়াই গত রোববার শুরু হয়নি। অনেক আগেই তার শুরু।
ওবামার ছোটখাট খেলেয়াড় হওয়ার ইচ্ছা নেই। দেশে ও বিদেশে তার নীতি সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। তিনি এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে রাজনৈতিক অভিজাতদের একটি বড় অংশ তার বিরদ্ধে প্রচারণায় নেমেছেন। ওবামার বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে বেশ কতক অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে আছে, ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্মেছেন, তার কোনো অধিকার নেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার। অবশ্য ওবামা সফলভাবেই এর জবাব দিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরেও তিনি একটি বড় জয় পেয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসে রাশিয়ার সঙ্গে করা স্টার্ট-৩ চুক্তিটির অনুমোদন পেয়েছেন। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ চুক্তি অনুযায়ী দুটি দেশই পরমাণু অস্ত্র তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় কমিয়ে ফেলতে সম্মত।
কিছুদিন আগেই আরেক ঝামেলায় জড়ালেন। মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে তার ইউরোপীয় মিত্রদের সামরিক সহায়তা দিয়ে তৃতীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। যদিও আগের দুটি যুদ্ধই (ইরাক ও আফগানিস্তান) তিনি শেষ করতে পারেননি।
ওবামা বিরোধীরা তাকে নিয়ে এমনকি নোংরা সব খেলা খেলল। যেমন, যাজক টেরি জোন্সের কোরান পোড়ানোর ঘোষণা। প্রথমত এই চালে মুসলিম বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে এবং এর ফলে নির্বাচনের আগে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে বিলম্ব হবে। কাজেকাজেই ওবামা জনপ্রিয়তা কমবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে এবং ওবামাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারার জন্য দোষ দেওয়া যাবে। এটা বললে কিছুই বাড়িয়ে বলা হবে না যে, টেরি জোনস যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন।
একইসময়ে তিনি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ নিলেন। এরমধ্যে আছে, লিবিয়ার যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের খুব কম হবে বলে তিনি ঘোষণা দিলেন। লিবিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারও করা হয়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস অবসর নিচ্ছেন। তিনি ওবামা বিভিন্ন তৎপরতা দেখভাল করতেন। তার স্থলে আসছেন বর্তমান সিআইএর প্রধান লিওন প্যানেট্টা। তিনি বিল ক্লিনটনের প্রশাসন চালিয়েছেন। অন্তর্গতভাবে তিনি ডেমোক্রাট সমর্থক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ডেমোক্রাট সমর্থকরা চালালে ওবামাকে তার নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা বাজেট তার সমর্থকরা নিয়ন্ত্রণ করলে নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না।
লাদেনকে হত্যা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় ওবামার সবচেয়ে বড় সাফল্য। বিশ্বে মঞ্চে এই ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় ওবামা বহু সুবিধা পাবেন। তিনি তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেন। কোনো কোনো জরিপে তা বেড়েছেও। দুটি জরিপে দেখা গেছে এ মুহূর্তে ওবামার জনপ্রিয়তা ৫৪ শতাংশ। এছাড়া আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও তাকে উপরে ঠেলে তুলবে।
সংক্ষেপে বলা যায়, লাদেনকে হত্যার ঘটনাটি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওবামার ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১১