ঢাকা: হাতি উঠবে কাঠগড়ায়! এমন খবরে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আসামের হাইলাকান্দি জেলা আদালতে ভিড় জমে উৎসাহীদের। অবশেষে দুপুর পৌনে তিনটেয় আদালত চত্বরে এসে দাঁড়ায় ৩৫ বছরের মা গোলে আর তার ৮ বছরের কন্যা বুলবুল।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বিষয়টির সূত্রপাত চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান নিজ বাড়িতে একটি স্ত্রী হাতি পুষতেন। ২৮ জানুয়ারি তিনি কুলাউরা থানায় অভিযোগে জানান, বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে বাচ্চা সহ তার মাদি হাতি চুরি গিয়েছে। মোখলেসুর রহমানের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা হাতি দু‘টিকে সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার কৈলাসশহরে নিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ত্রিপুরা ও বরাক উপত্যকায় থাকা আত্মীয়দেরও সতর্ক করে দেন তিনি। পাথারকান্দিতে থাকা তার দুই আত্মীয় এ নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক মণিলাল গোয়ালা ও মুখ্যমন্ত্রীর বরাক বিষয়ক উপদেষ্টা গৌতম রায়ের শরণাপন্ন হন। শেষে আসামেই হাতি দু’টির দেখা মেলে। হাইলাকান্দির এসপি রাজেন সিংহ জানান, লাখিরবন্দ গ্রাম থেকে খবর আসে, সেখানে শাবকসহ একটি হাতি রয়েছে। মঙ্গলবার তাদের হাইলাকান্দি শহরে নিয়ে আসা হয়।
হাতি উদ্ধারের খবর পেয়ে, শনিবার সীমান্ত পার হয়ে হাইলাকান্দিতে হাজির হন মোখলেসুর। এ দিকে, হাইলাকান্দির জনৈক মজুরুল ইসলাম বড়ভুঁইয়া হাতিগুলো নিজের বলে দাবি তোলেন। মজুরুলের বক্তব্য , ৮ বছর আগে তার হাতিটি হারিয়ে গিয়েছিল। এ নিয়েই দেখা দেয় জটিলতা।
এ দিন, আদালতে বিচারক জয়দেব কোচের সামনে হাতিরা শুঁড়ের আদরে মোখলেসুরকে কাছে টেনে নেয়। এ সব দেখে পুলিশেরও মনে হচ্ছে যে হাতি মোখলেসুরের। কিন্তু, আইনে শুঁড়ের আবেগ প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। বিচারক দু’পক্ষেরই বক্তব্য শোনেন। এরপর, হাতিদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের বনদফতরের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বনদফতরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তবেই হাতির হাত-বদলের ছাড়পত্র মিলবে। ভারতের বনকর্তাদের মতে, ভারতে সব পোষা হাতির শরীরে মাইক্রো-চিপ ঢোকানো থাকে। তা থেকেই সব তথ্য মেলে। কিন্তু, বাংলাদেশের হাতির শরীরে তা থাকে না। ওই হাতিদের শরীরেও চিপ মেলেনি। ফলে হাতিরা যে বাংলাদেশের তা মোটামুটি নিশ্চিত।
রাজেন সিং জানান, মোখলেসুর রহমানের কাছে হাতির মালিকানা সংক্রান্ত সব কাগজপত্রও রয়েছে। কিন্তু, আইনি জটিলতার কারণে এখনই ফেরত দেয়া যাচ্ছে না। কারণ, হাতি হলেও বিদেশি তো বটে! বেআইনিভাবে তাকে সীমান্ত পার করা হয়েছিলো। আইন মেনে স্বদেশে ফেরার হ্যাপা বিস্তর। পুলিশের মতে, হাতি হস্তান্তরে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে। তাই পুলিশ এখন ভারতের বন দফতরের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে। হাতি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আগামী ২৩ জুনের আগে কোর্টে দাখিল করতে হবে। এরপর আদালতের কথা মেনেই শুরু হবে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া।
এদিকে যাদেরকে নিয়ে চলছে এত হাঙ্গামা সেই গোলে ও বুলবুল আপাতত হাইলাকান্দি থানার পাশে আন্তর্জাতিক অতিথি হিসেবে পুলিশের যোগার করা ভারতীয় ঘাস ও কলাগাছ সাবাড় করতে ব্যস্ত। দু’দিন ধরে মণে মণে ঘাস ও কলাগাছ যোগাড় করতে গিয়ে নাজেহাল পুলিশ। হাতির খোরাক আর কতদিন জোগাতে হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এসপি সাহেবও।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৫
আরআই