ঢাকা: সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র ও চীনকে নিয়ে গত ক’দিন ঘরে রুশ-পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, তা উড়িয়ে দিল বেইজিং। তারা জানিয়েছে, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) দমনে অভিযানরত রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই চীনের।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং আনুষ্ঠানিকভাবে এ অবস্থান জানান। বেইজিংয়ে আয়োজিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই চীন সরকারের। ’
সম্প্রতি আইএস দমনে রাশিয়া অভিযানে নামলে তাদের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা। এ অবস্থায় রুশ ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর ছড়ায়, সিরিয়ায় অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার কোনো সংঘাত বাধলে মস্কোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে লড়বে চীন। আর এতে চীনের বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিংও অংশ নিতে পারে।
বেইজিংয়ের এমন অবস্থান ব্যাখ্যার পর এখন রুশ ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের এ ধরনের খবরকে ‘অনুমাননির্ভর কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করছে চীনা সংবাদমাধ্যম।
রণতরী লিয়াওনিংকে সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় টারটুস বন্দরে দেখা গেছে এবং তার সঙ্গে একটি গাইডেড মিসাইল ক্রুজ শিপও রয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছিল সে বিষয়ে হুয়া চুনিং বলেন, ‘সম্প্রতি বিমানবাহী রণতরীটি তার যান্ত্রিক পরীক্ষা ও সামরিক সক্ষমতা যাচাইয়ে সাগরে গিয়েছে। ’ ব্রিফিংয়ে এর বেশি কিছু বলেননি চীন সরকারের এ মুখপাত্র।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অঞ্চল দখলে নিয়ে ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে আইএস। এরপর জঙ্গি সংঠনটি বিদেশি নাগরিকদের অপহরণ ও বন্দি করে শিরোশ্ছেদ ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা শুরু করলে তাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা আইএস দমনে বিমান হামলা শুরু করে।
এরপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে আইএস নির্মূলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়াও। ৪ অক্টোবর থেকে এ হামলা জোরদারের ঘোষণা দেয় মস্কো।
সিরিয়ার চার বছরব্যাপী এ গৃহযুদ্ধে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়াও জড়িয়ে গেলে বড় ধরনের সংঘাতের দামামা বেজে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে ভূমধ্যসাগরে চীনের রণতরী দেখা যাওয়ার খবরটি যুদ্ধক্ষেত্রে মস্কোর উপস্থিতিরও আশঙ্কা বাড়ায়।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই অবস্থান ব্যাখ্যার পর চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়, ‘হুয়া চুনিংয়ের মন্তব্যের সঙ্গে আর কিছু যোগ করার নেই। ’
সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যার পাশাপাশি বুধবার চীনের প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমসও এক সম্পাদকীয়তেও বেইজিংয়ের চিন্তাভাবনা নিয়ে কিছু কথা বলে। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘সিরিয়ায় চীন সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে, এ খবর ভিত্তিহীন গুজব। ’
সেখানে বলা হয়, ‘সামরিক হস্তক্ষেপ নয়, উপরুন্ত সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বিগ্ন চীন। কারণ তারা মনে করে সামরিক পদক্ষেপ সবসময়ই সংকটের সমাধান আনে না। সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এইচএ/