ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষায় কেঁপে উঠলো উ. কোরিয়া!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষায় কেঁপে উঠলো উ. কোরিয়া!

ঢাকা: বুধবার (০৪ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে সাতটা) ৫.১ মাত্রায় কেঁপে ওঠে উত্তর কোরিয়া। কিছু পরই কর্তৃপক্ষের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি।



তবে এখনও এ বোমা পরীক্ষার সঙ্গে ভূমিকম্পের কোনো সংযোগ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে মুখ খোলেনি উত্তর কোরিয়া। বুধবার দিনের যেকোনো সময় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার ঘোষণার অপেক্ষায় বসে নেই প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি, এ ভূকম্পন প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ নয়। মানবসৃষ্ট কারণেই কম্পনটি অনুভূত হয়েছে। দেশগুলো ধারণা করছে, কোনো নিউক্লিয়ার টেস্টের কারণেই এভাবে কেঁপে উঠেছে উত্তর কোরিয়া।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, কম্পনটির কেন্দ্র ছিল উত্তর কোরিয়ার রিয়াংগং প্রদেশের সুংজিবায়েগাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর পূর্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এ জায়গাটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বোমার ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালানোর স্থান পুঙ্গে-রি সাইট থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।

ধারণা করা হয়ে থাকে, ২০০৬ সাল থেকেই উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক বোমার ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। এর সবই পুঙ্গে-রি সাইটে চালানো হয়।

এ ব্যাপারে জাপানের চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা বলেছেন, আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি বলে মনে হচ্ছে। উত্তর কোরিয়া খুব সম্ভবত পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়ে থাকতে পারে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের একজন একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অস্ট্রেলীয় পারমাণবিক নীতি ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ক্রিসপিন রোভেরে বলেছেন, ভূকম্পন ও এর প্রকৃতি বলছে, পারমাণবিক বোমার পরীক্ষাই চালানো হয়েছে। তবে একটা হাইড্রোজেন বোমার তুলনায় এ কম্পনের মাত্রা যথেষ্ট কম। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে তা হাইড্রোজেন বোমা কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।

মার্কিন অলাভজনক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান র‌্যান্ড কর্পোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট্টে বলেছেন, যে বোমার পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় ফেলা বোমার সমান শক্তির। তবে এটি কোনো হাইড্রোজেন বোমা নয়। বোমাটি থার্মোনিউক্লিয়ার হলে দশগুণ বেশি প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা।

চীনা বিশ্লেষকরাও এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করছেন।

পারমাণবিক বোমার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে হাইড্রোজেন বোমা। ‘থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা’ নামেও এটি পরিচিত। সাধারণ পারমাণবিক বোমার সঙ্গে এর মূল পার্থক্যটা হলো, এটি হাইড্রোজেন ফিউশনের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়। অন্তত ৫০ কিলোটন ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে এ বোমা।

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ‘হাই-অ্যালার্ট’ জারির পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রীরাও জরুরি বৈঠকে বসেছেন। সেই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে নিন্দা আর সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন নেতারা।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার এ পরীক্ষা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আমরা তা সহ্য করবো না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ বলেছেন, এ পরীক্ষার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, উত্তর কোরিয়া আসলে একটি দুর্বৃত্ত দেশ। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দেশটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, যদি উত্তর কোরিয়ার দাবি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং এ ঘটনায় আমি নিন্দা জানাচ্ছি।

উত্তর কোরিয়ার পূর্ববর্তী পারমাণবিক পরীক্ষা

৯ অক্টোবর, ২০০৬
প্রথমবারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এ বোমা প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধ। পুঙ্গে-রি সাইটে পরীক্ষাটি চালানো হয়। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, ততোটা শক্তিশালী ছিল না এ বোমা। এক কিলোটনেরও কম ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমা ‘লিটল বয়’র দশভাগের একভাগ ক্ষমতার ছিল এ বোমা।

২৫ মে, ২০০৯
দ্বিতীয় বারের মতো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। প্রথমটির চেয়ে এটি শক্তিশালী ছিল। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সে সময় জানায়, বোমার শক্তি ছিল ২০ কিলোটনেরও বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমা ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাটম্যান’ এক সঙ্গে জোড়া দিলে যে ক্ষমতার বোমা হবে, উত্তর কোরিয়ার এ বোমার শক্তি ছিল তার সমান।

উত্তর কোরিয়া এ পরীক্ষার বিষয়ে মুখ না খুললেও দক্ষিণ কোরিয়া জানায়, পুঙ্গে-রি সাইটের কাছেই কিলজু শহরের কোথাও পরীক্ষাটি চালানো হয়। এ পরীক্ষার সময় মৃদু কম্পনে কেঁপে ওঠে উত্তর কোরিয়া।

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
পুঙ্গে-রি সাইটের আশেপাশের এলাকায় ফের ভূকম্পন দেখা যায়। পরে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কর্তৃপক্ষের বরাতে নিশ্চিত করে, তৃতীয় দফায় পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬/আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা
আরএইচ

** উ. কোরিয়া সংলগ্ন সীমান্তে তেজস্ক্রিয়তার পরীক্ষা চালাবে চীন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।