ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারতের দলিতরা এখনো দলিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১১
ভারতের দলিতরা এখনো দলিত

পুরী: ‘হরিজনরা এখান থেকেই প্রার্থনা করবে। ’ শক্তির দেবী কালি নির্দেশিত এই বাণী সংবলিত সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে মন্দিরের সামনে।

মন্দিরের বাইরে ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে নিচু বর্ণের হিন্দুরা প্রার্থনা করবে। ভিতরে গিয়ে দেবীর দর্শন লাভ তাদের জন্য নিষিদ্ধ। এই নির্দেশ নামা লেখা রয়েছে ভারতের উড়িষ্যার পুরী জেলার একটি মন্দিরের প্রবেশ মুখে।

কিন্তু ২০১০ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে দলিত সম্প্রদায়ের তিনজন স্কুল ছাত্রী দেবীর প্রসাদ নিতে মন্দিরে প্রবেশ করলে বাঁধে বিপত্তি। উঁচ্চ বর্ণের হিন্দুরা এই অচ্ছুত (!) সম্প্রদায়কে এক ঘরে করে রেখেছে। তাদের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন এমনকি বর্গা চাষের জমিটুকুও ছিনিয়ে নিয়েছে।

ওই মন্দিরের রক্ষক বলেন, ‘এটা অনেকদিন ধরে চলে আসা ঐতিহ্য। দলিতরা এই ঐতিহ্য নষ্ট করায় তাদের আমরা ক্ষমা করে দিতে পারি না। আমাদের বাবারাও হরিজনদের মন্দিরের ভেতর যেতে দিতেন না। তাদের অনুসরনে আমরাও তাই-ই করি। মরে গেলেও এটা হতে দেবো না। ’

যে তিনজন মেয়ে ওই মন্দিরে ঢুকেছিল তাদের মধ্যে একজন চন্দনা ভয়। তিনি বলেন, ‘মন্দিরে বৈষম্য থাকা উচিত নয়। উঁচু জাতের মানুষদের মতো আমরাও দেবীর কাছাকাছি যেতে, তার প্রসাদ নিতে পারি। ’

চন্দনা আরও বলে, ‘আমরা তো একই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তাহলে কেনো তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে?’

চন্দনা যে গ্রামে থাকে তার নাম রানাপদ। এই গ্রামে মোট ৮০টি দলিত পরিবারের বসবাস। অধিকাংশই ভাগচাষী। কিন্তু গত বছরের ওই ঘটনার পর থেকে তাদের কোনো কাজে নেওয়া হচ্ছে না। উঁচু বর্ণের হিন্দুরা মিলে তাদের ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে এই কাজ করেছে বলে তারা জানায়।

এমনকি, যে সমস্ত ভূস্বামী তাদের জমি দলিতদের দিয়ে চাষ করাতো। তারাও তাদের জমি ফিরিয়ে নিয়েছে।

তাদের নারী-পুরুষ কাউকেই কাজে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানায় দলিত এক ভাগচাষী।
 
ওই অঞ্চলে এই সমস্যার উদ্ভব হওয়ার পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচির আওতায় দলিতদের কাজে নেয়। এই কর্মসূচির আওতায় তারা রাস্তা নির্মাণের কাজ করে। কিন্তু যখন দলিতরা তাদের মজুরি চাইতে গেল তখন পাওনা মজুরির অর্ধেক দেওয়া হলো।

দলিত কৃষকরা বলেন, ‘এই এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সবাই উচ্চ বর্ণের। ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলবে এমন কোনো কাজ তারা করবে না। ’

অপরদিকে ওই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি সঞ্জয় দাশ ভার্মা দলিতদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় ভোট ব্যাংক নিয়ে কোনো রাজনীতি করি না। আমি সব সময় আমার এলাকাকে এ সকল সমস্যার ঊর্দ্ধে রাখতে চেষ্টা করি। ’

কিন্তু মন্দিরের বাইরের সাইনেবোর্ড প্রমাণ করে ভিন্ন চিত্র। এখানে দলিত শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে কিছুটা হলেও রাজনীতি হয়। অথবা এটা সেই প্রাগৈতিহাসিক বর্ণপ্রথার কুৎসিত অস্তিত্বেরই প্রমাণ দেয়। দলিতরা এখানে মন্দিরের বাইরে থেকে দেবীর কৃপা প্রার্থনা করে আর মন্দিরের ভেতরে কৃপা ভোগ করে তথাকথিত উঁচু জাতের মানুষেরা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ২৩ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।