ঢাকা: গত ৪ জুলাই ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। ১৭৭৬ সালের এদিনটিতে দেশটির স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরি হয়।
কিংবদন্তীর মতো ডালপালা ছড়িয়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে গেছে জন হ্যানকক এবং তার হাস্যকর, বাগাড়ম্বরপূর্ণ সই।
লোকমুখে শোনা এবং প্রচলিত কিংবদন্তী থেকে যতোটুকু জানা যায়, আমেরিকার এই স্থপতি ঘোষণাপত্রে সই করার সময় সচেতনভাবেই অন্যদের চাইতে বড় আকারে সই দিয়েছিলেন। কারণ হলো, বৃদ্ধ স্থুলকায় রাজা জর্জ (ইংল্যান্ড) যেনো চশমা ছাড়াই অনায়াসে তা পড়তে পারেন।
এ হলো আমেরিকানদের কুছপরোয়া নেই স্বভাবের সুস্পষ্ট প্রকাশ। তবে কাহিনীটা খুব নিখুঁত নয়। প্রকৃত সত্যটা আসলে অতোটা নাটকীয়ও নয়। ন্সোপস ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইট এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে এভাবে, তৎকালীন কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট জন হ্যানকক এতো বড় করে সই করার কারণ রাজার সঙ্গে তার রেষারেষি নয় বরং অন্যান্য আরো কারণের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে অন্যদের মধ্যে তিনিই যে প্রথম স্বাক্ষরকারী তা বুঝিয়ে দেওয়া ।
যেহেতু তিনিই এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রথম স্বাক্ষরকারী সে কারণে স্বাক্ষরটি দেন ঘোষণাপত্রের নিচের অংশে নাম সইয়ের জায়গার ঠিক মাঝখানে যাতে সহজেই সবার চোখে পড়ে। আমেরিকার নবীন কংগ্রেসে তিনিই ছিলেন নেতা। তিনি জানতেন তার পরে যারা সই করবেন তাদের স্বাক্ষর নিশ্চয় খুব ক্ষুদ্র হবে।
তবে এ বিষয়টি নিয়ে এতো জল্পনা কল্পনার আরো কারণ আছে। অনেকগুলো স্বাক্ষরের মধ্যে কিছু স্বাক্ষর কেনো বড় অক্ষরে এবং বাম দিকে দেওয়া? যেখানে অন্যদেরগুলো রয়েছে ডানদিকে। ন্যাশনাল আর্কাইভ এর ব্যাখ্যায় বলছে, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অন্যরা সনদের নীচে ডানদিকে স্বাক্ষর করেন। অর্থ্যাৎ বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরগুলো তাদের ভৌগলিক অবস্থান অনুসারে সাজানো। যেমন, সর্ব উত্তরের প্রতিনিধি হওয়ায় নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের প্রতিনিধির স্বাক্ষর দিয়ে স্বাক্ষরের তালিকা শুরু হয়েছে, শেষ হয়েছে সর্ব দক্ষিণের রাজ্য জর্জিয়ার প্রতিনিধির স্বাক্ষর দিয়ে।
আর এ বিষয়টা মনে রাখতে হবে, আমেরিকার স্বাধীনতা সনদটি ছিল খুবই গুরুত্ব¡পূর্ণ একটি দলিল। আর এ দলিলে নিজের নাম সই করা আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই সনদের স্বাক্ষরকারীরা কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তার ফাঁসি নিশ্চিত। আর এ জন্য অন্যদেরও ধরা হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে অন্য আরেকটি গল্প হলো- হ্যানককের এই কাব্যিক এবং সাহসিকতাপূর্ণ স্বাক্ষর দেখে অন্য কংগ্রেস সদস্যরা অনুপ্রাণীত হয়ে বিনা দ্বিধায় ঘোষণাপত্রে সই করেছিলেন। গল্পটা বেশ সরল তবে সত্য নয়। ওই ঘোষনাপত্রে হ্যানকক শুধু যে সবার আগে সই করেছিলেন তাই নয় অন্যরা সই করার কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি তা করেন। ন্যাশনাল আর্কাইভ এ বিষয়টির ব্যাখ্যায় বলেছে, এই ঘোষণাপত্র সম্পর্কে বড় যে ভুলটি সবেচেয়ে বেশি প্রচার পেয়েছে তা হলো, সব প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সনদটি স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই। এটি সঠিক নয়।
প্রকৃত ঘটনা হলো, হ্যানকক ঘোষণাপ্রত্রটিতে স্বাক্ষর করেন একজন মাত্র লোকের উপস্থিতিতে। লোকটি হলেন, কংগ্রেসের সচিব চার্লস থমসন।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর ব্যাখ্যায় বলছে, আমেরিকার স্বাধীনতা সনদে ১৭৭৬ সালের জুলাই মাসে প্রকৃত পক্ষে কেউই স্বাক্ষর করেননি। স্বাক্ষর প্রদান শুরু হয় মূলত ২ আগস্ট থেকে। প্রথম স্বাক্ষর করেন জন হ্যানকক তার বিখ্যাত সেই অতিকায় স্বাক্ষর দিয়ে। আর এই স্বাক্ষর দান চলে নভেম্বরের শেষ অবধি।
তবে যাই হোক আমেরিকার এই প্রতিষ্ঠাতাদের স্বাক্ষর সম্বলিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি একটি মর্যদাপূর্ণ শিল্পকর্ম হিসেবে সযত্মে এবং শ্রদ্ধায় আগলে রেখেছে আমেরিকানরা।
ইন্টারনেট অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ০১২৬ ঘণ্টা, ০৬ জুলাই, ২০১১