দাদাব: সোমালিয়াতে ভয়াবহ খরার কারণে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী দেশ কেনিয়াতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে তারা।
গত ৬০ বছরের মধ্যে আফ্রিকার শিং খ্যাত সোমালিয়াতে এটাই ভয়াবহতম খরা।
তীব্র দাবদাহ মাথায় নিয়ে ক্ষুধার্ত, দুর্বল শরীরে পায়ে হেঁটে অথবা খোলা ট্রাকে করে তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির দাদাবের দিকে যাচ্ছে। এ শিবিরে পৌঁছতে কয়েক দিন সময় লাগে।
৩২ বছর বয়সী মারিয়ান আবদুল্লাহ নামের এক সোমালি নারী বললেন, ‘গৃহপালিত সব পশু মারা গেছে এবং ঘরে-বাইরে কোনো খাবারের না পেয়ে আমরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছি। ’ এসময় তার ছয়টি ছোট ছোট শিশু গাঁ ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে অন্য একটি পরিবারের দেওয়া সামান্য দুধের শেষ অংশটুকু ভাগাভাগি করে খাচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাত দিন পথ হেঁটে মাত্র গত রাতে এখানে এসেছি। বাচ্চাদের জন্য খাবার দেওয়া হবে বলে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রচারণার ওপর ভরসা করে আমরা এখানে এসেছি। ’
মারিয়ানের মতো আরও অনেক অসহায় মা বাচ্চাদের নিয়ে দাদাব শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার জন্য দাঘাহেলি নিবন্ধন অফিসে অপেক্ষা করে আছে। গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে এমন আরো শত শত ভুখা মানুষ।
আরেক শরণার্থী বশির বলেন, ‘এবারের খরাটা খুবই ভয়ানক। কিছুদিন আগেই একটি খরা হয়ে গেল। পরপর দু’বার খরা হওয়ার কারণে এর ভয়াবহতাও বেশি। ’
বশির সোমালিয়ার দক্ষিণের উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
বশির বলেন, ‘আমাদের কোনো খাবার ছিল না। পশুগুলোও একে একে মারা যাচ্ছিল। যে কয়টা বেঁচেছিল তা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। শেষ সম্বলটুকু বেচে দিয়ে সোমালি সিলিংয়ের একটি বড় ব্যাগ এখন আমি বহন করছি। ’
খরার কারণে প্রায় এক চতুর্থাংশ সোমালি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের অনেকেই প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোর ওপর সোমালিয়ার কট্টরপন্থী ইসলামি গ্রুপ আল-সাবাব তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ভয়াবহ খরায় মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘবের উদ্দেশ্যেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
গত দুই দশকে সোমালিয়াতে অব্যাহত গৃহযুদ্ধ এবং খরার কারণে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়েছে।
দাদাবের একজন ত্রাণকর্মী বলছেন, এখানে অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইসসিআর’র হিসাব অনুযায়ী, গত জুন মাসে ৩০ হাজার সোমালি দাদাবে আশ্রয় নিয়েছে। এদের বেশিরভাগই তীব্র খরার শিকার। এ সংখ্যা গত বছরের প্রায় পাঁচ গুণ।
ইউএনএইসসিআর’র মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়ক ইদ্রিস ফারাহ বলেন, ‘একদিনে আমরা এক হাজার লোকের নিবন্ধন করেছি। এটা পরিষ্কার, অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখন নতুন করে ৯০ হাজার লোকের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে। ইতিমেধ্যে দাদাবের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ছড়িয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, ০৭ জুলাই, ২০১১