জুবা: বহু প্রতিক্ষার পর শনিবার নেচে, গেয়ে, বাঁশি বাজিয়ে স্বাধীনতা উদযাপন করল দক্ষিণ সুদানের অধিবাসীরা।
উল্লসিত জনতার মধ্যে কে যেনো চিৎকার বলছিল, ‘অবশেষে আমরা স্বাধীন হলাম।
নতুন এ আফ্রিকান জাতিটির লাল, সাদা আর সবুজ এই তিন রংয়ের পতাকাটি তৈরি হয়েছে মাত্র গতকাল। আর এর মধ্যে রাজধানী জুবার সবার হাতে হাতে তা পৌঁছে গেছে।
বিশ্বনেতাদের মধ্যে যারা এই ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষি হয়ে থাকলেন তাদের মধ্যে অন্যতম, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা।
সুদানে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ১৯৮৪ সালে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া আবুক মাকুয়াক এসেছেন স্বাধীনতা দিবসে সামিল হতে। অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘এ হলো স্বাধীনতা, একটি নতুন অধ্যায়। ’
তিনি বললেন, ‘আর যুদ্ধ নয়, আমরা জন্ম নিয়েছি যুদ্ধে, বড় হয়েছি যুদ্ধে এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি তাও যুদ্ধের মধ্যেই। ’
আফ্রিকার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় দেশ সুদান কয়েক দশকের জাতিগত সহিংসতার পর এ বছরের জানুয়ারিতে এক গণভোটের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যায়। এই গণভোটটি হয় ২০০৫ সালের শান্তিচুক্তির ধারাবাহিকতায়। এ চুক্তির মাধ্যমেই দেশটিতে কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। দেশটির উত্তরাংশ নিয়ন্ত্রণ করে আরব মুসলিমরা। আর এরাই কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিস্টান অধ্যুষিত দক্ষিণাংশেও প্রভাবশালী ছিল। এ দুই অংশের মধ্যে দীর্ঘকালীন গৃহযুদ্ধে প্রায় ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
শনিবার স্বাধীনতা দিবসে নিহতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবদেন করা হয়। দেশটির সাবেক বিদ্রোহী নেতা এখন দক্ষিণ সুদানের প্রথম প্রেসিডেন্ট সালভা কির মায়ারদিত বলেন, ‘তার দেশের জনগণ বহু বছরের রক্তপাতের কথা কখনো ভুলবে না। কিন্তু এখন ক্ষমা করার এবং সামনের দিকে অগ্রসর হবার সময়। ’
দেশটিতে সংঘর্ষে লিপ্ত প্রধান তিনটি অঞ্চলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আজ যেমন আমরা স্বাধীনতা উদযাপন করছি, আমি দারফুর, আবেই এবং দক্ষিণ কুরদুফানের জনগণকে নিশ্চিত করে বলতে চাই আমরা আপনাদের ভুলব না। ’
তিনি বলেন, ‘যখন আপনারা কাঁদেন, তখন আমরাও কাঁদি। যখন আপনাদের রক্ত ঝরে তখন আমাদেরও ঝরে। ’
এদিকে নতুন রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানকে স্বীকৃতি দিয়ে ওয়াশিংটনে একটি বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি এভাবে স্মরণ করা হবে যে, যুদ্ধের অন্ধকার পেরিয়ে একটি নতুন উষার আলোর সম্ভাবনা দেখা দিল। একটি নতুন পতাকা জুবার বুকে উড়ছে এবং পৃথিবীর মানচিত্র নতুন করে নির্মাণ হয়েছে। ’
এদিকে জুবাতে নতুন দূতাবাস খোলার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব উইলিয়াম হেগ।
অনুষ্ঠানে ওমর আল বশির বসে ছিলেন তার সাবেক শত্রু দক্ষিণ সুদানের মানুষের পাশাপাশি। একটি নতুন জন্মভূমি পাওয়ার জন্য এখানের জনগণকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি এখনো বিশ্বাস করেন একটি ঐক্যবদ্ধ সুদানে। সুদানীদের জন্য এটাই সেরা পছন্দ। তবে দক্ষিণ সুদানের মানুষের স্বপ্নকেও তিনি সমর্থন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১১