ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মার্কিন নৌবাহিনীর এক পঞ্চমাংশেরও বেশি নৌযান অকেজো!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১১
মার্কিন নৌবাহিনীর এক পঞ্চমাংশেরও বেশি নৌযান অকেজো!

নিউইয়র্ক: সামরিক শক্তিতে শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পাঁচভাগের এক ভাগেরও বেশি নৌযান অকেজো। এ নৌযানগুলোর অবস্থা এতোটাই বেহাল যে যুদ্ধে অংশ নেওয়া তো দূরে থাক সাগরে ভাসানোও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এই অচল জাহাজের সংখ্যা সামনে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ নৌবাহনীর কর্মকর্তারা অকেজো বা ত্রুটিপূর্ণ নৌযান মেরামতের জন্য অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

মার্কিন কংগ্রেসের আর্মড সার্ভিস রেডিনেস সাব-কমিটির সভাপতি র‌্যানডি ফোর্বস সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন, ২০১১ সালে মোট সামরিক নৌযানের ২২ শতাংশ ইনস্পেকশন পাস পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালে মাত্র ৮ শতাংশ জাহাজ জীর্ণ যন্ত্রপাতি অথবা অপর্যাপ্ত মজুদ যন্ত্রপাতি বহনের জন্য ত্রুটিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করা হয়। এফ/এ-১৮ হরনেটস, ইএ-১৮জি গ্রোলারস এবং পি-৩সি ওরিয়ন পর্যবেক্ষণ বিমানবাহী জাহাজগুলোর অর্ধেকই সম্মুখযুদ্ধের জন্য আর মোটেও প্রস্তুত নয়।

র‌্যানডি ফোর্বস ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন প্রতিনিধি। তিনি রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

কংগ্রেসে মঙ্গলবার এক শুনানিতে ফোর্বস একটি তালিকা দেখিয়ে জানান, মার্কিন নেভির বিমানবাহী রণতরী এবং ডেসট্রয়ারগুলো গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা অব্যবস্থাপনার কারণে যথাস্থানে মোতায়েনের জন্য নির্ধারিত সময়ের ৪০ ভাগ সময়ই নষ্ট করে। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার, স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা অথবা মূল ইঞ্জিন। এমনকি নতুন জাহাজগুলোর অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এদিকে মার্কিন নেভির সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে গত বছর ইরাক এবং আফগানিস্তান অভিযানে সহযোগিতার জন্য রণতরী এবং বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় এবং জাপানে সুনামিতে ত্রাণ সহায়তার জন্য সামরিক বিমান ও নৌযান ব্যবহার করা হয়েছে।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের বিরুদ্ধে এবং লিবিয়াতে গাদ্দাফি বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানেও যুক্ত রয়েছে নেভি ও বিমানবাহিনী।

শুনানির সময় দু‘জন জ্যেষ্ঠ নেভি কর্মকর্তা ভাইস অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ব্রুক এবং কেভিন ম্যাককেই ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, জাহাজের সক্ষমতা সমস্যা ভালর দিকে না গিয়ে বরং দিন দিন আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। ব্রুক জানান, মেরামতের জন্য ৫০০ কোটি ডলার অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।

গত দশকে মার্কিন নেভিতে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অনেক বেড়েছে। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমাতে একজন দক্ষ পরিচালকের নির্দেশনার ওপর নির্ভর না করে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জন্য রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীও ছাঁটাই করা হয়েছে।

তবে এরই মধ্যে আবার সামরিক খাতে বাজেট কর্তনের মানে হলো জাহাজগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বা প্রয়োজনীয় রিজার্ভ যন্ত্রপাতি রাখা হবে না বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে আবার নতুন করে ৩টি সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে মার্কিন নেভি। প্রথমত, বারাক ওবামা প্রশাসন প্রতিরক্ষা খাতে ১২ বছরে ৪০ হাজার কোটি ডলার বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, পেন্টাগন বিশেষ করে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে জল ও আকাশপথে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের ওপর জোর দিচ্ছে। এ অঞ্চলকে নেভির জন্য হুইলহাউস বলা হয়। তৃতীয়ত, পরবর্তী দশকে যুক্তরাষ্ট্র যদি জাহাজ নির্মাণে জোর না দেয় তাহলে নেভিতে জাহাজের সংখ্যা প্রায় ৭০ এ নেমে আসবে যেমনটি রিগ্যান সরকারের আমলে সাবমেরিনের হাল হয়েছিল। সেই সঙ্গে রণতরীগুলো ২০২০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।