ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমার-ভারতের অস্ত্র চুক্তির নিন্দা

নব ঠাকুরিয়া, অতিথি কলামিস্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১১
মিয়ানমার-ভারতের অস্ত্র চুক্তির নিন্দা

নয়াদিল্লি: বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত তার প্রতিবেশী মিয়ানমারের নিপীড়ক সামরিক সরকারকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। যেখানে মিয়ানমারের জনগণ আজও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে।

গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে তাদের রয়েছে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস।

মিয়ানমারের আধাসামরিক বাহিনীকে ভারতের দেওয়া অস্ত্র সহায়তার বিরুদ্ধে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত ২২ জুলাই এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মিয়ানমার থেকে ভারতে নির্বাসিত জনগণ এবং তাদের সমব্যথী অনেকেই অংশ নেন। নয়াদিল্লির রাস্তায় ভারতের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের আধা সামরিক সরকারকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ জানায় তারা।

নাইপিদাউয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির সামরিক সম্পর্কে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এসময় কয়েকশ প্রতিবাদকারী এবং ভারতীয় সুশীল সমাজের বেশকিছু নাগরিক এসময় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

ভারতের দেওয়া এই অস্ত্র-গোলাবারুদ সহায়তা মিয়ানমারের কয়েক লাখ নিরীহ মানুষের জীবন নিতে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ব্যবহার করবে বলেও প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে আশংকা প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতি ভারত সরকার ৫২টি সামরিক ট্রাক ভর্তি অস্ত্র এবং গোলাবারুদ মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখেও ভারত সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে।

ভারতে নির্বাসিত মিয়ানমারের নাগরিক এম কিম বলেন, ‘এটা খুবই কষ্টকর এবং হতাশাজনক যে ভারত সরকার বার্মার সামরিক শাসকদের অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করে গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী কাজ করেছে। বার্মার সামরিক শাসনকে বিশ্বের সবচেয়ে হিংস্র সামরিক শাসন বলা হয়। কয়েক দশক ধরে শান্তি এবং গণতন্ত্রের জন্য যেসকল নিরীহ জনগণ বার্মায় আন্দোলন করে আসছে এই অস্ত্র দিয়ে তাদের শিকারে পরিনত করা হবে। ’

তিনি বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে বার্মায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির ওপর বর্বরোচিত হামলা, রাজনৈতিক কর্মী, এমনকি সাংবাদিকদের ওপরও বার্মার সামরিক সরকার নির্যাতন করছে। বার্মায় কেউই নিরাপদ নয়। এখনও বার্মাতে ২২০০ রাজনৈতিক কর্মী কারাগারে আটক আছে। ’
 
প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে প্রতিবাদকারীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে মিয়ানমারের শান্তিকামী এবং গণতন্ত্রকামী মানুষদের সহায়তা করার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করে।

নব্বই দশকের গোড়ার দিকে ভারত সরকার মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল। সেসময় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন অং সান সুচি। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের এই মনোভাব পরিবর্তন হয়ে যায়। ভারত তখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং শান্তির দোহাই দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের সমর্থন জানানো শুরু করে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি ভারত কিছু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভারত আবারও সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন জানিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রমাণ দেবে। ভারতকে এই অঞ্চলের শন্তি প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। ’ কয়েকশ ভারতীয় এবং মিয়ানমারের অনেকগুলো  সংগঠনের স্বাক্ষর করা স্মারকলিপিতে একথা বলা হয়।

মিয়ানমার থেকে অপর এক নির্বাসিত গণতন্ত্রপন্থী ফোরাম বার্মা সেন্টার দিল্লির চেয়ারম্যান ড. সু বলেন, ‘যখন বার্মার অন্য বড় প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ানমারের সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির ওপর সামরিক বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে নিন্দা জ্ঞাপন করছে, ঠিক সেসময় ভারত সরকার মিয়ানমারকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করে যাচ্ছে। ’

ড. সু আরও বলেন, ‘বার্মার গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার কর্মীরা আটকের শিকার হচ্ছে। তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে। বার্মায় প্রতিনিয়তই গণতন্ত্র, আইনের শাসন, শান্তি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আর একারণেই আমরা উদ্বিগ্ন। ভারতের দেয়া এই অস্ত্র-গোলাবারুদ শুধুমাত্র কাচিন, সান এবং কারেনের মতো সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির ওপরই ব্যবহার হবে না, যারাই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার হবে এসব অস্ত্র। ’

অন্য আরেক স্মারকলিপিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিয়ানমারকে দেওয়া অস্ত্র সহায়তা বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের শান্তি স্থাপনে এবং উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় স্বার্থের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পুনর্বিবেচনা করারও অনুরোধ জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘যদি ভারতের প্রতিবেশি দেশটিতে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলেই ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হবে। ’

প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে স্মারকলিপি প্রদান করেন উইমেন লীগ অব বার্মা, অল বার্মা স্টুডেন্টস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, আরাকান লিবারেশন পার্টি, অল বার্মা ডেমোক্র্যাটিক লুসেই উইমেন অর্গানাইজেশন, চিন হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন, চিন স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, কুকি উইমেন হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন, কাচিন ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, মাতু ইয়ুথ অর্গানাইজেশন, জোমি উইমেন ইউনিয়ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।