ঢাকা: ইউরোপে গত কয়েক বছরে যতোগুলো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই ঘটিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সে তুলনায় ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা সংঘটিত হামলা একেবাবে নগণ্য।
ইউরোপিয়ান পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইউরোপোলের সংগৃহীত উপাত্ত এরকম তথ্যই দিয়েছে। তাদের উপাত্তে দেখা যাচ্ছে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে ইসলামপন্থীরা মাত্র ৬টি হামলা করেছে।
অপর দিকে নব্য নাৎসিবাদীদের মতো ডানপন্থী উগ্রবাদীরা সম্প্রতি ইউরোপে তাদের অবস্থান অনেকটা দৃঢ় করেছে। তবে গত চার বছরে তারা মাত্র ৫টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
পশ্চিমে বিশেষ করে ইউরোপে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত যে, অভিবাসীদের চাপে তারা নুয়ে পড়েছে। আর অভিবাসীদের এই ক্রমবর্ধমান সংখ্যাধিক্য ইমলামি মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের বিস্তারের পথও উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
তবে ইউরোপোলের এ তথ্য সেই ধারণা এবার পাল্টে দেবে বলে মনে হচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিবাসী ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণ অনেক কম।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত চার বছরে ধারাবাহিকভাবে ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০০৭ সালে মোট সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল ৫৮১। সেই সংখ্যা ২০১০ সালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ২৪৯টিতে। এই সংখ্যায় অবশ্য ভল করে দেওয়া এবং ব্যর্থ হামলার সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এসব ঘটনার বেশিরভাগই বোমা হামলা বা গোলাগুলির ঘটনা। কিন্তু সম্প্রতি অসলো বোমা হামলা ও গুলির ঘটনাসহ এসব ঘটনায় হতাহতের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত অনেক কম ছিল।
সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বেশিরভাগই ঘটিয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ফ্রান্স ও স্পেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ অবধি তারা এক হাজার ৩২৬টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে!
ইউরোপের এসব বিচ্ছিন্নতাবদীরা হয় স্বাধীনতা (স্পেনের বাস্ক বিচ্ছিন্নতাবাদী ইটিএ) অথবা কলম্বিয়া ও কুর্দিস্তানের মতো পিছিয়ে পড়া কোনো দূরবর্তী অঞ্চলে তৎপরতা চালায়। কম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এ তৎপরতা চললেও ইউরোপের অস্থিতিশীলতার চেহারা দেখতে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে যথেষ্ট অবদান রেখেছে এসব ঘটনা।
ইউরোপোলের হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইউরোপে বামপন্থী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বামপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ২০০৭ সালে ছিল ২১টি সেই সংখ্যা ২০১০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়ে ৪৫টিতে। তবে এই চরপন্থীদের উত্থানের পেছনে সাম্প্রতিক অর্থনৈতকি মন্দা এবং জনগণের একটা বিশাল অংশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি একটা বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত চার বছরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে প্রায় ৯টি ঘটিয়েছে একটিমাত্র বিশেষ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো। এই ক্ষুদ্র গ্রুপগুলি একটি মাত্র ইস্যুতে আন্দোলন করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বিস্তৃত গ্রুপ হচ্ছে পশুঅধিকার আন্দোলন।
পশুঅধিকারবাদী চরমপন্থী নামে পরিচিত এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন গবেষণাগার, কসাইখানা এবং পশম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোতে অনেক হামলা চালিয়েছে।
গত ২২ জুলাই নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বোমা হামলা এবং উটোয়া দ্বীপে যুবসম্মেলনে গুলি করে ৯২ জন মানুষকে নির্বিচারে হত্যাকারী অ্যানডারস ব্রেইভিকও একজন ডানপন্থী উগ্রবাদী বলে প্রমাণ মিলেছে। তিনি স্বীকারও করেছেন তার পেছনে দু’টি চরমপন্থী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১১