ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনি ‘হত্যাকারী’ সেই সৈন্যকে ক্ষমার সুপারিশ নেতানিয়াহুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
ফিলিস্তিনি ‘হত্যাকারী’ সেই সৈন্যকে ক্ষমার সুপারিশ নেতানিয়াহুর গুলির পর রাস্তায় পড়ে শরিফের নিথর মরদেহ, অস্ত্র তাক করে আছেন আজারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: নিরস্ত্র ও আহত এক ফিলিস্তিনিকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যায় ‘দোষী সাব্যস্ত’ ইসরায়েলের সৈন্য সার্জেন্ট এলর আজারিয়াকে ক্ষমা করে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার সুপারিশের ফলে প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন ক্ষমার ঘোষণা দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) সামরিক আদালতে সার্জেন্ট আজারিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণার পর রাতেই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ সুপারিশ করেন। আবদুল ফাতাহ আল শরিফ (২১) নামে ওই ফিলিস্তিনি তরুণকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করার পর আজারিয়ার সাজা ঘোষণা অপেক্ষমান রয়েছে।

৩ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সামরিক আদালত রায়ে বলেন, আহত হয়ে অচল অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকার পরও ‘প্রতিহিংসাবশত’ শরিফকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আজারিয়ার এ পদক্ষেপ দেশের সামরিক বাহিনীর মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না। কোনো নিরস্ত্রকে হত্যা করা ইসরায়েলি বাহিনীর সমর্থন পেতে পারে না।

ফেসবুক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, “এটা আজারিয়া, তার পরিবার, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, তাদের মা-বাবা, নাগরিক-যাদের মধ্যে আমিও আছি...একটা কঠিন ও যন্ত্রণার দিন। আমি আজারিয়ার জন্য ক্ষমা সমর্থন করছি। ”

প্রধানমন্ত্রীর এই পোস্টের পর প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের সুপারিশের অপেক্ষা করছেন।

গত বছরের মার্চে অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন শরিফ। তার আগের বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরে ব্যাপকহারে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া, ছুরি ও বন্দুক নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে ৪২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। সেসময় হামলাকারীদের প্রতিহত করতে সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দায়িত্ব পালনকালে শরিফ নিরস্ত্র অবস্থায় আহত হয়ে পড়ে থাকলেও তাকে খুব কাছ থেকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেন আজারিয়া।

আদালতে আজারিয়া দাবি করেন, শরিফের গায়ে বিস্ফোরক পোশাক (ভেস্ট) পরিধেয় ছিল বলে সন্দেহ হওয়ায় তিনি গুলি করেন। তার আগে আরেক সৈন্যকে ছুরিকাঘাত করেছেন শরিফ।

কিন্তু আদালতে এই দাবি করলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজারিয়া বলেছিলেন, শরিফ ক্রমশ হুমকি হয়ে উঠছিলেন বলে গুলি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তার আগে অবশ্য ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আজারিয়া তার পাশের এক সৈন্যকে বলছেন, “এই লোক (শরিফ) আমার বন্ধুকে আঘাত করেছে, তার মরাই উচিত”। এরপরই তিনি খুব কাছ থেকে গুলি করেন শরিফকে।

সংবাদমাধ্যম মনে করছে, এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে বিভক্তির প্রকাশ করছে। আজারিয়ার পক্ষে জাতীয়তাবাদী ইসরায়েলিদের ৠালি এবং কিছু জ্যেষ্ঠ রাজনীতিককে প্রচারণা চালাতে দেখা গেলেও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা মনে করেন, আজারিয়া যে কাজ করেছেন সেটা সামরিক বাহিনীর মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না।  

যদিও ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে আজারিয়ার বিচার চলছে। কিন্তু খোদ ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীই বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
এইচএ/

আরও পড়ুন
** ফিলিস্তিনি হত্যায় ইসরায়েলি সৈন্য দোষী সাব্যস্ত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।