ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘মুঝে মাফ কার দো’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
‘মুঝে মাফ কার দো’ ধর্ষণের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েও রেহাই পেলেন না রাম রহিম সিং

হাজারো উগ্র ভক্ত রাস্তায় নেমে তাকে নির্দোষ দাবি করে মুক্তি দাবিতে সহিংসতা চালালেও খোদ ‘বাবা’ রাম রহিম সিংই স্বীকার করে নিলেন, তিনি ধর্ষক। সেজন্য কেঁদে-কেটে মাফও চেয়েছেন আদালতের কাছে। তবে আদালত তার কান্নাকাটিতে গলে না গিয়ে সাজাই দিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হলে ‘কয়েদি নম্বর ১৯৯৭’ হিসেবে কারা প্রকোষ্ঠে দিন কাটাবেন দুই অনুসারীর ধর্ষক এই স্বঘোষিত ‘ধর্মগুরু’।

সোমবার (২৮ আগস্ট) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হরিয়ানার রোহটাক কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত রাম রহিম সিংকে ‌দুই নারীকে ধর্ষণের পৃথক দুই মামলায় ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দোষী সাব্যস্ত করার পর সাজা ঘোষণার জন্য সোমবারকে নির্ধারণ করেন কেন্দ্রীয় তদন্ত অধিদফতরের (সিবিআই) গঠিত এই বিশেষ আদালত।

শুক্রবারের রায় হরিয়ানারই পঞ্চকুলায় সিবিআই’র বিশেষ আদালতে হলেও নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সোমবার খোদ বিচারককেই উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় রাম রহিমকে বন্দি রাখা কারাগারে।

আদালত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাজা ঘোণার আগে মামলার বাদী সিবিআই ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কথা বলতে দেওয়া হয়। এসময় কথা বলেন রাম রহিমও। তিনি তার দোষ স্বীকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদালতের কাছে মাফও চান। বারবার বলতে থাকেন, ‘মুঝে মাফ কার দো’ (আমাকে ক্ষমা করে দাও)। কিন্তু সিবিআই’র আইনজীবী মামলার ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন রাম রহিমের বিরুদ্ধে। সাজা ঘোষণার পর আরও বেশি ভেঙে পড়েন রাম রহিম।

এজলাসের কার্যক্রম শেষ হলে রাম রহিমকে নিয়ে যাওয়া হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে কারাগারের প্রকোষ্ঠে।

সাজা ঘোষণার পর ধর্ষণের অভিযোগকারী দুই নারী ও সিবিআই কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা রাম রহিমের দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড চেয়ে আবেদন করবেন। আর রাম রহিমের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করবেন। আশা করছেন, সর্বোচ্চ আদালতে এই সাজা পুনর্বিবেচিত হবে।  

এদিকে, সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাম রহিমের কথিত আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘ডেরা সাচা সৌদা’র সদরদফতর এলাকা সিরসায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সেখানে এরইমধ্যে দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর মিলেছে। শুক্রবার দোষী সাব্যস্ত ঘোষণার পরই সিরসা, পঞ্চকুলাসহ হরিয়ানাজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়। আহত হয় ৩ শতাধিক লোক।

তবে বিকেলে সাজা ঘোষণার পর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার জানান, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। কেউ যদি রাজ্যের শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি রাজ্যে শান্তি ধরে রাখতে ‘ডেরা সাচা সৌদা’র অনুসারীদেরও সহযোগিতা কামনা করেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রাম রহিম সিংয়ের সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে হরিয়ানা, পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশ। যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য সতর্ক রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর গাড়িও।

১৯৯৯ সালে ওই দুই নারী অনুসারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে রাম রহিমের বিরুদ্ধে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে বেনামে যাওয়া চিঠিতে তোলা এ অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে ২০০২ সালে রাম রহিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। এরপর সেই মামলার বিচার করতে হরিয়ানারই পঞ্চকুলায় বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর মাধ্যমে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে গত শুক্রবার রায় ঘোষণা হয়। এরপর কড়া নিরাপত্তায় সোমবার ঘোষণা করা হলো সাজা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।