সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিনভর ভোট হয় সেখানে। ইরাক, তুরস্ক ও ইরানের সংযোগস্থলে অবস্থিত কুর্দিস্তানের রাজধানী ইরবিলসহ তিন আঞ্চলিক প্রদেশের ২ হাজার ৬৫টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন স্থানীয়রা।
যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক-ইরান-ইরাকসহ পশ্চিমাদের হুমকি-ধামকির মধ্যে মঙ্গলবারই (২৬ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক ফল জানান আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি। তিনি বলেন, ভোটে নিরঙ্কুশ জয় হয়েছে ‘হ্যাঁ’র। কুর্দিশ রুদাও টিভি চ্যানেলে বলা হয়, প্রাথমিক ফল অনুযায়ী ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে স্বাধীনতার পক্ষে।
কুর্দি নেতারা এই গণভোটের ফলাফলকে তাদের জাতির জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে প্রজন্মের পর প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, এরমধ্য দিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠনে বাগদাদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার দ্বার সুপ্রসারিত হলো।
তবে বাগদাদ বলছে, গণভোট আয়োজনটি ছিল অসাংবিধানিক। কেবল কুর্দিস্তানেই নয়, ইরাকের পুরো উত্তরাঞ্চলজুড়ে কুর্দিদের কাছ থেকে ভোট নেওয়ার ব্যাপারটিই ছিল সংবিধান-বহির্ভূত।
গণভোটের পর ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি সাফ বলে দেন, তার দেশের ভাঙনের কোনো ভোট কখনোই গ্রহণ করা হবে না। ইরাকের ঐক্য সুরক্ষায় এবং একতাবদ্ধ হয়ে বসবাসে আগ্রহী নাগরিকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। যুক্তরাষ্ট্র, তাদের ইউরোপীয় মিত্র কয়েকটি দেশ, কুর্দিস্তানের প্রতিবেশী তুরস্ক ও ইরানও কড়াভাষায় এই গণভোট ও ফলাফলের বিরোধিতা করেছে। তারা সবাই বলছে, এই গণভোট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করবে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান লড়াইকে ব্যাহত করবে। নিজেদের দেশে কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত তুরস্ক সরাসরিই বলেছে, এ ধরনের তৎপরতায় সামনে আগালে কুর্দিস্তানকে একঘরে করে ফেলা হবে, যেটা তাদের অনাহারের দিকে নিয়ে যাবে।
এমন সতর্কতা-হুঁশিয়ারিতে অবশ্য ভীত নন কুর্দি নেতা বারজানি। তিনি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাগদাদ সরকারকে আন্তরিক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবরোধের হুমকি দেবেন না। আমরা জানি আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে, কিন্তু আমরা পেরিয়ে উঠবো। বিশ্ববাসীকেও বলবো, আমাদের লাখো জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলন এই গণভোটকে সম্মান দেখান।
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের পর্যব্ক্ষেণ, ইরাকের তুরস্ক ও ইরান সীমান্তের অনেক এলাকায় কুর্দিদের বসবাস বলে দেশ দু’টি এই গণভোটের বিরোধিতা করছে। তাদের শঙ্কা, এই কুর্দিস্তান স্বাধীন হয়ে গেলে তাদের কুর্দিরাও স্বাধীন রাষ্ট্র চাইবে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এখন কাজ করছে বাগদাদ সরকারের হয়ে। এই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কুর্দিস্তান স্বাধীন হয়ে পড়লে কার্যত তাদের নীতি-কৌশলেরই পরাজয় হবে।
কিন্তু গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট পড়লেও এখন আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক কাউকেই পাশে পাচ্ছে না কুর্দিস্তান। আপাতত এই ইস্যুতে এখনও কোনো মন্তব্য মিলছে না মধ্যপ্রাচ্য-রাজনীতির ময়দানের শক্তি রাশিয়ার। এই অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে কুর্দিস্তান কোন দিকে যাবে, সে দিকেই নজর সংবাদমাধ্যমের।
মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলেও কুর্দিদের স্বাধীন কোনো রাষ্ট্র নেই। ইরাকের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ শতাংশ এই কুর্দিরা দশকের পর দশক ধরে নৃশংস নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে সাদ্দাম হুসাইনের ইরাকের সঙ্গে কুয়েত ও পশ্চিমা জোটের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর স্বায়ত্তশাসন লাভ করে কুর্দিস্তান।
কিন্তু স্বায়ত্তশাসন পেলেও কুর্দিরা অভিযোগ করে আসছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যের শিকার। তুরস্ক ও ইরানের কুর্দিরাও অধিকার-বঞ্চনার অভিযোগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে। এরমধ্যে আইএসের কথিত খেলাফতের যুদ্ধ শুরু হলে কুর্দিরাও বাগদাদ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে নামে। ক’মাস আগে ইরাক থেকে আইএস বিতাড়িত হতে থাকায় স্বাধীনতার দাবিতে সরব হয় কুর্দিরা।
** ইরাক-যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্কের বিরোধিতায়ও গণভোটে কুর্দিরা
** গণভোটে যাচ্ছে কুর্দিস্তান, নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
এইচএ/