ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নির্বাচনে মোদীর ‘আতঙ্ক’ হতে পারেন তিন নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
নির্বাচনে মোদীর ‘আতঙ্ক’ হতে পারেন তিন নারী

সামনের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে ভারতের জাতীয় সংসদ (লোকসভা) নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে তুমুল প্রচারণা-সমাবেশ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও বিরোধী দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসসহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক দলগুলো। 

যে মোদীর কাঁধে চড়ে বিজেপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল, সেই মোদীকেই প্রধানমন্ত্রীর আসনে ধরে রাখতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে হারানো মসনদ ফিরে পেতে চায় রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস।

পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন মেরুকরণের আভাস মিলছে বিভিন্ন রাজ্যে।

তবে নেতৃত্বের জন্য এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোচিত মোদী সামনের নির্বাচনেও জিতে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি-না, সে নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ-ভবিষ্যদ্বাণী। যদিও মোদী তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্বচ্ছ ভারত গড়তে গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরছেন দেশবাসীর সামনে।

বিরোধীপক্ষের নানা প্রচারণার পাশাপাশি সামনের নির্বাচনে আর কী বাধা হতে পারে মোদীর? রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনই চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন মতে, নির্বাচনে মোদীর প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারেন তিন নারী।

এই তিনজন হলেন- কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বংশধর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সম্প্রতি তাকে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের ‘ইনচার্জ’র দায়িত্ব দেন দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী।

৪৭ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও চালচলনের মধ্যে অনেকে তার দাদি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেখতে পান। কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা তাকে দেখেন দলের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিসেবে।

লোকসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে সেই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়ায় বিজেপি শিবিরকে নতুন অঙ্ক কষতে হচ্ছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কা যে অঞ্চল সমন্বয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, সেখানেই প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর আসন। আর এই অঞ্চলে মা সোনিয়া গান্ধী ও ভাই রাহুলের আসনে (আমেথি ও রায়বেরেলি) প্রচারণায় প্রিয়াঙ্কা যতবারই গিয়েছিলেন, জনতার ঢল দেখেছিল কংগ্রেস।

লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৮০টি আসনের উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস তাদের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নামানোয় মোদী ও তার দলকে বাড়তি মাথা ঘামাতেই হবে বোঝা যায়।

মমতা বন্দোপাধ্যায়
ভারতের নারী রাজনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে উর্ধ্বগামী জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের সঙ্গে রাজপথ কাঁপিয়ে দীর্ঘদিনের বাম সরকারের অবসান ঘটানো মমতা সম্প্রতি বিজেপিবিরোধী মহাসমাবেশে কয়েক লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়েছেন, মঞ্চে জড়ো করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়া, পাঁচ রাজ্যের সাবেক ও এক বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন প্রদেশের শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর নেতাদের।

কৃষকদের নয়াদিল্লি অভিমুখে লংমার্চে যখন মোদীর কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হচ্ছিল, তখন কৃষক-বান্ধব নেত্রী বলে পরিচিত ৬৪ বছর বয়সী মমতা কলকাতার সেই মহাসমাবেশে হুংকার ছেড়ে বলেন, ‘মোদীর দিন শেষ। ওষুধ কেনার সময় যে রকম আমরা এক্সপেয়ার ডেট দেখি, সেরকম মোদীর দিন শেষ। ’

মায়াবতী
বিজেপিকে যে নারী নেত্রীদের নিয়ে বাড়তি গুটি চালতে হবে, তাদের একজন হলেন উত্তর প্রদেশেরই বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী। মূলত সনাতনী ধর্মের নিম্নবর্ণের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে জনপ্রিয়তা পান তিনি।  

সম্প্রতি ৬৩ বছর বয়সী মায়াবতীর দল সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট গড়েছে। সমাজবাদী পার্টি আবার দলিত সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সংখ্যালঘু মুসলমানদের পক্ষেও কাজ করে। সেজন্যই নিম্নবর্ণের লোক এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের সমর্থন মায়াবতীর দিকেই যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করে তার দল।

যদিও সাম্প্রতিক এক মতামত জরিপে দেখা যায়, ভারতজুড়ে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই।

তবু বিজেপির চন্দ্র শেখর ও অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের নারী নেত্রীদের চেয়ে বিরোধী দলের নারী নেত্রীরা বেশি জনপ্রিয়। ফলে নারীসহ বেশিরভাগ ভোটার তাদের পক্ষেই থাকবে।  

আর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সম্প্রতি তিন হিন্দু-প্রধান রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় বিষয়টি মাথায় রেখেই গেরুয়া শিবিরকে আরও কৌশলী হতে হবে বলে মনে করেন যশবন্ত সিনহা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
এসএমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।