বার্লিন: সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ মিশরের বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারের তিনি বলেছেন, মিশরের বর্তমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের শক্ত ভিত্তি রয়েছে এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবাদকারীদের পক্ষে। ’
সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে গ্লাসনোস্ত (খোলামেলা আলোচনা) এবং অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব পেরেস্ত্রোইকার জন্য পশ্চিমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন গর্বাচেভ। বর্তমানে ৮০ বছর বয়সী সংস্কারবাদী এই নেতা ১৯৯০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান।
মিশরে সামরিক শাসনের অবসান দাবিতে গত শনিবার থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত এবং ১৮শ জনের উপর আহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতনের পর এবার দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছে মিশরের জনগণ।
এই প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থানের কথা জানালেন গর্বাচেভ।
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে গর্বাচেভ বলেছেন, গণতন্ত্রের দাবিতে আরব বিশ্বে মানুষের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে কারণ, তারা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন এবং এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যে, জনগণের কোনও কথাই শোনা হয় না।
তিনি বলেন, ‘এটা পরিস্কার যে, পেছন থেকে কেউ তাদের উস্কানি দিচ্ছে না। বিক্ষোভের বিষয়গুলো আসলে বহুদিন থেকেই জমে উঠেছে এবং এর অর্থ হচ্ছে তারা যে গণতন্ত্রের পথে হাঁটছেন তা কাজ করছে না। ’
তবে এই অঞ্চলের জন্য একই ধাঁচের কোনও কার্যকরী সমাধান নেই বলে মনে করেন গর্বাচেভ।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, ওই সব দেশে যে বিক্ষোভ হচ্ছে তার জন্য একই মডেলের কোনও সমাধান রয়েছে। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে- আপনি একে উপেক্ষা করতে পারবেন না। ’
গর্বাচেভ গত মঙ্গলবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে গিয়েছিলেন। ২০১২ সালে এই শহর থেকেই তার নামে একটি পুরষ্কার দেওয়া হবে। এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তনে বিশেষ অবদানের জন্য মিখাইল গর্বাচেভ পুরষ্কার দেওয়া হয়। ২০১২ সালে এ পুরষ্কারের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, বিশ্বের মেগাসিটিগুলোর টিকে থাকার সক্ষমতা। ওই বছর মার্চে এ পুরষ্কার ঘোষণার কথা রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে রাশিয়া সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া এখন পুতিনকে নিয়ে একটা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আগমী মার্চে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এবং আবার নির্বাচিত হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। ’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে কতোটা সঙ্গতিপূর্ণ তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা গণতান্ত্রের নীতির প্রতি অনাস্থার প্রকাশ। ’
উন্নত এবং প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রীক দেশ হওয়ার পথে রাশিয়া এখনও অনেক দূরে অবস্থান করছে বলে মনে করেন গর্বাচেভ। তিনি বলেন, এর জন্য দরকার সেই সব নেতাদের যারা সত্যি সত্যি গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।
গর্বাচেভের মত হলো, রাশিয়া এখনও টেকসই এবং কার্যকর গণতন্ত্রের মাঝপথে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের উদ্ধৃতি দিয়ে গর্বাচেভ বলেন, ‘তিনি ঠিকই বলেছিলেন, সরকার ব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠ নয় কিন্তু বাকি অন্য তন্ত্রগুলো এর চেয়ে খারাপ। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১