ত্রিপোলি: লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের (এনটিসি) সদস্য আলি তারহুনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, লিবিয়ার সার্বভৌমত্ব এখন হুমকির মুখে। সেই সঙ্গে কাতার দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এই তারহুনি লিবিয়ার প্রয়াত নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে তিনি পদত্যাগ করেন। পরে এনটিসিতে যোগ দেন।
গত বৃহস্পতিবার লিবিয়াতে গাদ্দাফি পরবর্তী প্রথম সরকার গঠিত হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি লিবিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য বিপদ দেখতে পাচ্ছি। আমি লিবিয়ার জনগণের সম্পদের প্রতি আসন্ন হুমকি দেখতে পাচ্ছি। ’
এদিন একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তারহুনি এনটিসির অধীনস্থ নির্বাহী পরিষদের তেল ও অর্থ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। গত বুধবার তার দায়িত্ব শেষ হয়। তিনি বলেন, উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি কঠিন নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
কাতারের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে তারহুনি বলেন, ‘দেশে এখন শুধু অভিজাতদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। ’
পার্শ্ববর্তী দেশ কাতার লিবিয়াতে গাদ্দাফি বিরোধী বিদ্রোহ শুরু হলে নগদ অর্থ তহবিল এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে জানা যায়।
তারহুনি বলেন, ‘এখন যেসব কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে তারা সবাই অভিজাত। শোনা যাচ্ছে এনটিসির কণ্ঠস্বর যা নির্বাচিত নয়। এসব হলো সেইসব কণ্ঠস্বর যারা বাইরের অর্থ, অস্ত্র এবং সম্পর্ক দ্বারা সমর্থন পেয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘কিছু দেশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এখানে যাদের স্বার্থ রয়েছে.. এদের মধ্যে অনেকে এখন ভাবছে, লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের প্রভাব রয়েছে। ’
বৃহস্পতিবার গঠিত নতুন সরকারে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তারহুনি। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্নই এখন সবচে গুরুত্বপূর্ণ। ৯০ ভাগ লিবীয় এখন প্রগতিশীল এবং তারা একটি জনগণের রাষ্ট্র দেখতে চায়। ’
বর্তমানে লিবিয়া অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি তেল খনি ও সীমান্তের নিরাপত্তা এবং বেকারত্বের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ রয়েছে বহু... জাতীয় সেনাবাহিনী গঠন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সীমান্ত, খনির নিরাপত্তা, বিপ্লবীদের শান্ত করা এবং রাজপথে অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করা। ’ লিবিয়ার নতুন সরকারকে এসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অবশ্য তারহুনির সঙ্গে লিবিয়ার একাধিক কর্মকর্তাও বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্রের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারহুনি জানান, দেশে এখন বেকারত্বের হার ৩০ শতাংশ। বেসরকারি খাত অত্যন্ত দূর্বল। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিদ্যমান ব্যবস্থা এখনও গাদ্দাফি আমলের অবকাঠামোতেই চলছে। লিবিয়ার জনগণের উদ্বেগের একটি বড় কারণ এটি।
তবে নতুন সরকারে কোনও পদে দায়িত্ব নিতে নারাজ আলি তারহুনি। তিনি বাইরে থেকেই সাধ্য মতো সরকারকে সহায়তা করতে চান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১১