ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রমায় ভুগছে হংকংয়ের কিশোর-কিশোরীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯
ট্রমায় ভুগছে হংকংয়ের কিশোর-কিশোরীরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া অসংখ্য কিশোর-কিশোরী অংশ নিয়েছে হংকং বিক্ষোভে। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের জুন মাসে চীন প্রস্তাবিত একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই আন্দোলন রূপ নেয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে।

প্রায় ছয় মাস ধরে চলমান এ বিক্ষোভে তরুণদের নেতৃত্বে অংশ নিয়েছেন সব বয়সী হংকংবাসী। অসংখ্য কিশোরী-কিশোরীও এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হংকং বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কিশোর-কিশোরী বিক্ষোভকারীরা ‘কালেক্টিভ ট্রমা’য় ভুগছে।

মনোবিজ্ঞানরা সতর্ক করে বলেন, বিক্ষোভের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হংকংয়ের নতুন প্রজন্মের এ অংশটি বিশ্বের অন্য উন্নত দেশের তরুণ প্রজন্মের চেয়ে অনেক ভিন্ন চিন্তাধারার অধিকারী হবে।

এক কিশোর বিক্ষোভকারী মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র জোনাথন বলেন, ছয় মাস আগে আমি যেমন মানুষ ছিলাম, এখন আর আমি তেমন মানুষ নই। আমি মনে করি, হংকংয়ের নতুন প্রজন্মের অনেকেই এ পরিস্থিতিতে রয়েছে।

দুই সপ্তাহ আগে হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে অবরুদ্ধ হাজারও বিক্ষোভকারীর সঙ্গে ছিলেন জোনাথনও। হংকং বিক্ষোভের অন্যতম সহিংস ঘটনা ছিল এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারই বয়স হয়নি এমন অনেক কিশোরই আটকে পড়েন ওই ক্যাম্পাসে।

ঠিক কী কারণে নিজেদের এতো ঝুঁকির মুখে ফেলছেন ওই কিশোররা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জোনাথন বলেন, আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমি আমার ও হংকংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন। কেমন শহরে আমরা ভবিষ্যতে বাস করতে যাচ্ছি তা নিয়ে চিন্তিত আমি। যদি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ছাড়াই নিরাপদ একটি শহরে আমরা বাস করি, তাহলে আমরা যা করতে চাই তা করতে পারবো না।

অপরদিকে মনোবিজ্ঞানীরাও এনিয়ে উদ্বিগ্ন। শিক্ষা ও মনোবিশেষজ্ঞ ভিক্টর চিং বলেন, আমি দেখেছি বাচ্চারা স্কুলের পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না। এটি খুব আশঙ্কাজনক। একাডেমিক কার্যক্রমে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে তারা। রাতে তারা ঘুমাতেও পারছে না। রাত ২টা-৩টায়ও তারা ফোনে থাকছে। সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা।

এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার জনের বয়স ১৮ বছরেরও কম।

পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় কী মনে হচ্ছিল জানতে চাইলে জোনাথন বলেন, আমার এখনো ক্যাম্পাসের ওই ভীত পরিস্থিতির কথা স্পষ্ট মনে আছে। সকালের নাশতা করার সময় হঠাৎ কেঁদে ফেলি আমি। ভবিষ্যতে কী হবে সেসব আমার মাথায় ঘুরছিল। ১০ বছরের জন্য কি কারাগারে থাকতে হবে আমাকে? আমি কি আমার পরিবার ও বন্ধুদের আর দেখতে পাবো?

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কয়েকমাস ধরে চলমান এ ট্রমার কারণে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখে দেবে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। সরকার, পুলিশ ও সিস্টেমের প্রতি অনাস্থা তাদের অন্য দেশের তরুণ প্রজন্মের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। এটি আশঙ্কাজনক।

আরও পড়ুন: হংকং পলিটেকনিকে ৪ হাজার পেট্রোল বোমা পেলো পুলিশ

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।