ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরাকে ‘ফের জেগে উঠছে’ আইএস 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
ইরাকে ‘ফের জেগে উঠছে’ আইএস 

ইরাকে নিয়ন্ত্রণ হারানোর দুই বছরের মাথায় আবারও দেশটিতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) শক্তি সঞ্চয় করছে বলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি। ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন লক্ষণ বিশ্লেষণ করে এবারের আইএসকে আগের চেয়ে শক্তিশালী ও বিপজ্জনক বলে ধারণা করছে তারা।  

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

কুর্দি ও পশ্চিমা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানায়, সম্প্রতি দেশটিতে আইএসের হামলা বেড়ে চলেছে।



ইরাকের উত্তরাঞ্চলে পাহাড়ঘেরা কুর্দিস্তানের সুলাইমানিয়া ঘাঁটিতে কর্মরত লাহুর তালেবানি। কুর্দিস্তানের জানইয়ারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তিনি। এ কর্মকর্তা জানান, এখনকার আইএস আল কায়েদার চেয়ে দক্ষ ও বিপজ্জনক।  

‘তাদের প্রযুক্তি ও কৌশল আরো উন্নত। এছাড়া বর্তমানে আরো অনেক বেশি অর্থের যোগান রয়েছে তাদের। তা দিয়ে সহজেই তারা অস্ত্র, যানবাহন, খাদ্য ও যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম। ফলে তাদের নির্মূল করা আরো কঠিন। এই আইএসকে বলা চলে স্টেরয়েড নিয়ে শক্তিশালী এক আল কায়েদা। ’ 

তালেবানি জানান, আইএস খেলাফত পতনের পর গত এক বছরে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠন নিজেদের পুনর্গঠিত করেছে।  

‘আমরা খেয়াল করছি সম্প্রতি তাদের কর্মতৎপরতা বেড়েছে। মনে হচ্ছে তারা পুনর্গঠন পর্যায় অতিক্রম করেছে। ’ 

বর্তমানে ভিন্ন ধারার আইএসের উত্থান হচ্ছে। যাতে শত্রুপক্ষের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হতে না হয়, সে জন্য তারা আর আগের মতো বিশেষ কোনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী নয়। বরং এরা পূর্বসূরি আল কায়েদার মতো ইরাকের হামরিন পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপনে থাকছে।  

তালেবানি বলেন, ‘এই মুহূর্তে হামরিন পার্বত্য অঞ্চলই আইএসের কেন্দ্র। হামরিন দীর্ঘ এক পার্বত্য এলাকা। ইরাকি সেনাবাহিনীর জন্য এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এ অঞ্চলে প্রচুর গুহা ও গোপন আস্তানা রয়েছে। ’ 

হামরিন পার্বত্য অঞ্চল

এদিকে বর্তমানে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে চলমান অস্থিতিশীলতাও আইএসকে পুষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লাহুর তালেবানি। তারা এ অঞ্চলের সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা তার। এটি ইরাকে এক পরচিত ও রক্তক্ষয়ী কৌশল।  

তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকে তা আইএসের জন্য দ্রুত স্বর্গপ্রাপ্তির মতো ব্যাপার। ’

বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাগদাদ ও কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্ক থেকেও সুফল ভোগ করছে আইএস। ২০১৭ সালে স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে কুর্দিস্তানে গণভোট হওয়ার পর থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।  

বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের কুর্দি পেশমার্গা নিরাপত্তা বাহিনী ও ইরাকের সরকারি বাহিনীর মধ্যে বিশাল এক নো-ম্যানস ল্যান্ড রয়েছে। এ অঞ্চলে এখন কেবলমাত্র আইএস জঙ্গিরাই বিচরণ করছে বলে জানান লাহুর তালেবানি।  

এছাড়া গোয়ের শহরের পাহাড়ি ফাঁড়িতে কর্মরত কুর্দিস্তানের পেশমার্গা বাহিনীর মেজর জেনারেল সিরওয়ান বারজানিও একই উদ্বেগের কথা জানান। অনিয়ন্ত্রিত ওই নো-ম্যানস ল্যান্ডে আইএস নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানান তিনি।  

সিরওয়ান বলেন, ‘গ্রেট জ্যাব ও টাইগ্রিস নদীর মধ্যকার ব-দ্বীপে স্থায়ীভাবে আবাস গেড়েছে আইএস। টাইগ্রিস সংলগ্ন এলাকায় তাদের তৎপরতা বেশি। আমরা দিন দিন তাদের কর্মতৎপরতা বাড়তে দেখছি। ’

পেশমার্গার গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় একশ’ আইএস জঙ্গি ওই এলাকায় আস্তানা গেড়েছে। তাদের মধ্যে আত্মঘাতী পোষাক পরা কিছু বিদেশিও ছিল।  

২০১৪ সালের আগস্টে গোয়ের অঞ্চলেই পেশমার্গা বাহিনী আইএসের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণ চালায়। আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে জানান মেজর জেনারেল সিরওয়ান।  

তিনি বলেন, ‘আমি ২০১২ ও ২০১৯ সালের মধ্যে মিল খুঁজে পাই। ১২ সালে আইএস নিজেদের সংগঠিত করতে শুরু করলো, মানুষের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে শুরু করলো। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তা চলতে থাকলে ২০২০ সালে তারা আবারও নিজেদের সংগঠিত করবে। আরো শক্তিশালী হয়ে আরো বেশি হামলা চালাবে। ’ 

খেলাফতের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে আইএস।  ছবি- সংগৃহীত

কুর্দিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, ইরাকে বর্তমানে ৪ থেকে ৫ হাজার আইএস যোদ্ধা রয়েছে। এছাড়া সমানসংখ্যক সুপ্ত শাখা ও সহানুভূতিশীল সমর্থক রয়েছে তাদের।  

হামরিন অঞ্চলে আইএস যতোটা নির্বিঘ্নে রয়েছে, তা চলতে থাকলে এক পর্যায়ে তারা ইরাক ও সিরিয়ার বাইরেও অভিযান চালানোর কথা ভাবতে পারে বলে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্দেশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন লাহুর তালেবানি।  

আইএসের পুনর্গঠিত হওয়ার ব্যাপারে একই ধরনের কথা জানিয়েছে ইরাকে নিযুক্ত ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কমান্ডার। তবে ইরাকি সরকার বাহিনী (আইএসএফ) ও কুর্দিশ নিরাপত্তা বাহিনী পেশমার্গা তাদের মোকাবিলায় সক্ষম বলে জানিয়েছেন তিনি।  

কমান্ডার অব টাস্ক-ফোর্স ইরাকের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইলিয়াম সেলি জানান, ২০১৪ সালের চেয়ে এসব বাহিনী আইএস মোকাবিলায় অনেক বেশি প্রস্তুত। সে সময় বলা চলে বিনা বাধায় মশুল শহরসহ ইরাকের তিন ভাগের এক ভাগ দখল করে নেয় আইএস।   

‘কিন্তু এখন (আইএসএফ) ও পেশমার্গা আর আগের মতো নেই। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আইএস মোকাবিলায় তারা অনেক বেশি সক্ষম’।  

সেলি আরো বলেন, ‘আইএস জঙ্গিরা বর্তমানে গুহা ও মরুভূমিতে লুকিয়ে আছে। কিন্তু কেউই এ অবস্থায় বেশিদিন থাকতে পারে না। অন্যদিকে তারা দল বেঁধে এসব অঞ্চল থেকে সটকে পড়বে সে সুযোগও নেই। গত ৬ মাসে আমার দেখা এরকম সবচেয়ে বড় দলটিতে জঙ্গি ছিল ১৫ জন। যদিও একজন আইএস জঙ্গিই আসলে অনেকজন। ’ 

বর্তমানে আইএস আত্মগোপনে আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে তারা অতর্কিত হামলা চালায়। এর আগেও এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে সন্ত্রাস ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে ইরাক। ফলে এ অঞ্চলসহ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য নতুন করে হুমকি আসছে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯ 
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।