মালে: মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তারই সাবেক রানিংমেট বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ওয়াহিদ।
নাশিদের ‘উদ্ধত’ আচরণের কথা উল্লেখ করে সাবেক সরকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রেক্ষিত বর্ণনা করতে গিয়ে ওয়াহিদ বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় নাশিদই তাকে রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন।
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ওয়াহিদের পদত্যাগ এবং দুই মাসের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
তবে নাশিদের এই অনমনীয় অবস্থান এবং অসম্ভব দাবি মালদ্বীপে আরো সহিংসতা বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ওয়াহিদ।
ফৌজদারি আদালতের প্রধান বিচারককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিরোধী দলের প্রতিবাদ এবং পরে পুলিশ সদস্যরা বিদ্রোহ করলে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। তবে পরে তিনি দাবি করেন, অস্ত্রের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
সমর্থকদের নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকলে নাশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে তাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এদিকে, নাশিদের নিরাপত্তা এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত বৃহস্পতিবার মালদ্বীপে এসেছে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেইক প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদের দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে একটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে ওয়াহিদ দাবি করেছেন, একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি বারবার নাশিদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের কোনো পরিকল্পনা ছিল না উল্লেখ করে ওয়াহিদ বলেন, ‘তিনি যদি একজন পরিপক্ক এবং দায়িত্বশীল নেতা হতে চান তাহলে তাকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পথ বেছে নিতে হবে। ’
পদত্যাগের ব্যাপারে নাশিদের ব্যাখ্যা এবং দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির ব্যাপারে ওয়াহিদ বলেন, ‘তার এই অবস্থান দেশে সহিংসতা বাড়াবে। দেশের মানুষ এবং সম্পদের ক্ষতি হয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না করা তার নৈতিক দায়িত্ব। ’
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ইতোমধ্যে মালদ্বীপে একজন বিশেষ দূত পাঠিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদ বলেন, ‘ভারত মালদ্বীপের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি জানি, পরিস্থিতির উন্নয়নে তারা কঠোর পরিশ্রম ককের যাচ্ছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এখন আমরা একজন বিশেষ দূতকে পেয়েছি। ’
ভারতীয় দূতের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে জানিয়ে ওয়াহিদ বলেন, ‘তারা মালদ্বীপের স্বার্থকে সবচে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমি আশাবাদী, ভারত এখানে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। ’
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর আন্তর্জাতিক মহলও মালদ্বীপ নিয়ে ভালই মাথা ঘামাচ্ছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহাকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেস তারাঙ্কো প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। নাশিদের সঙ্গেও তার দেখা করার কথা রয়েছে।
শনিবার মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেইকও ওয়াহিদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পরে তিনি নাশিদের দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। নাশিদের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ বিষয়ে ওয়াহিদ বলেন, ‘সবাই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চাচ্ছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, ভারত কেউই চাচ্ছে না পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাক। পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করতে মালদ্বীভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এমডিপি) আমার সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। ’
জনগণকে সহিংসতায় না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বলেছেন, মালদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে, পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে।
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা হবে না বলে জানিয়েছেন ওয়াহিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১২