ঢাকা: পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ইন্টারসার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই প্রধান জেনারেল আহমেদ সুজা পাশার অবসরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা দৃষ্টিকটুভাবেই দৃশ্যমান।
ধূর্ত এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা সব সময়ই ওয়াশিংটনের সঙ্গে কৌশলী সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন।
নতুন আইএসআই প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জহিরুল ইসলামের নিয়োগের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে দেয়, সুজা পাশার অবসর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা কাম্য ছিলো।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষপদের এই পরিবর্তনের খবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবক’টি প্রভাবশালী পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে যার নজির নিকট অতীতে বিরল।
তারপরও অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদমাধ্যমগুলোতে সাধারণত রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স বা ইসরায়েলের মতো দেশের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পদে পরিবর্তন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ঘটনার মতো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনের কথিত যুদ্ধে লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের কাছে আবপারার (আইএসআই হেডকোয়ার্টার) এই পরিবর্তন ব্যাপক মনোযোগ কাড়ে যা অনেকটা আশ্চর্যজনক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এই আবপারা থেকেই আইএসআই সমগ্র দক্ষিণ, মধ্য ও মধ্য-পূর্ব এশিয়ায় তাদের দাবার ঘুঁটির চাল নির্ধারণ করে।
আইএসআই’র এই পরিবর্তন নিয়ে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের সময়েও সাংবাদিকদের তরফে প্রশ্ন ওঠে জোরেশোরে। সুজা পাশার অবসর এবং তার স্থলে জেনারেল জহিরুলের নিয়োগ সম্বন্ধে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি জানতে সাংবাদিকরা নুল্যান্ডকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড কিছুটা বিব্রত হয়েই প্রসঙ্গটিকে অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সহকর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এই ব্যক্তি (জহিরুল) সম্বন্ধে আমি কিছুই বলতে পারবো না। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক সম্বন্ধেও আমি কিছু বলতে পারি না। ’
অনেকটা অসহায় হয়েই উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারগুলো গোয়েন্দা সংস্থার আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ও যোগাযোগের ব্যাপার। তাই আমি আপনাদের এসব প্রশ্ন আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ’
আইএসআই’র শীর্ষ পদের এই পরিবর্তন, দ্বান্দ্বিক গতিপথের মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ককে কোনদিকে মোড় নেওয়াবে তা জানতে কৌতুহলী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বললেও সাংবাদিকদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, মুখে পাকিস্তানকে পাত্তা না দিলেও পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানকে বিশেষ করে পাকিস্তানের এই গোয়েন্দা সংস্থাকে খুবই প্রয়োজন।
তবে গণমাধ্যমের সামনে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে একেবারেই অনিচ্ছুক ছিলেন।
তবে একটি গোপন রিপোর্টে ঠিকই এই সত্য উঠে এসেছে যে, পাশার অবসর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে। পাশার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাদের অতীতের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতাই এর পেছনের কারণ তা বুঝতে অভিজ্ঞজনদের খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১২