ঢাকা : মার্কিন সেনার নির্বিচার গুলিতে সংঘটিত কান্দাহারের হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে ‘গভীর’ দুঃখ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে টেলিফোন করে তার এই দুঃখের কথা জানান।
এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গত রোববার ভোরে আফগানিস্তানের কান্দাহারে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর এক সদস্য নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা করে। ওই মার্কিন সেনা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে বেসামরিক মানুষজনকে হত্যা করে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নিহত ১৬ জনের মধ্যে তিনজন নারী ও নয় জনই শিশু রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র তার চিরাচরিত নিয়মে ‘পূর্ণ’ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে রোববার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই ঘটনার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন।
এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টাও এক বিবৃতিতে জানান এই ঘটনার ব্যাপারে পূর্ণ তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি দোষীকে বিচারের সম্মুখীন করারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে, কাবুলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস আফগানিস্তানে অবস্থান করা তাদের সকল নাগরিককে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় সমস্ত আফগানিস্তান জুড়ে মার্কিন বিরোধী মনোভাব জোরদার হতে পারে।
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বিবৃতিতে এই ঘটনার ব্যাপারে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দাবি করেন।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময় সংঘটিত হল যখন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটা এখন প্রতিকূল থেকে প্রতিকূলতর হচ্ছে। মাত্র কিছুদিন আগেই মার্কিন ঘাঁটিতে পবিত্র কোরান পোড়ানোর ঘটনায় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে আফগানদের তীব্র মার্কিন বিরোধী ক্ষোভ। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় লাগাতার বিক্ষোভে সরকারি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৪১ জন প্রতিবাদকারী সে সময় নিহত হন। রোববারের এই ঘটনা সেই ক্ষোভের পালে নতুন করে আরো বাতাস যোগ করবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
এদিকে ঘাতক সেনাকে আটক করে কান্দাহারের একটি মার্কিন ঘাঁটিতে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় ওই সেনা ঘাঁটির নিকটবর্তী গ্রামের তিনটি বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত বেসামরিক মানুষদের ওপর গুলি চালানো শুরু করে।
রোববার ভোরের আগে রাত তিনটার সময় ওই সেনা পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের উদ্দেশ্যে বের হয় বলে জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আফগান-মার্কিন সম্পর্ক আবারো সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলো বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। হামিদ কারজাই এখন ইচ্ছে করলেও যুক্তরাষ্ট্রকে হয়ত আর ছাড় দিতে পারবেন না। কারণ, তাহলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আর এর ফলাফল হামিদ কারজাইসহ তার পুরো পরিবার ও গোষ্ঠীর জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়কর হবে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে এটি পরিষ্কার যে আফগানিস্তানে মার্কিন গ্রহনযোগ্যতা এখন সর্বকালের নিম্নতর পর্যায়ে অবস্থান করছে।
মার্কিনী সেনার নির্মম আর অচিন্ত্যনীয় এই হত্যাযজ্ঞের পরিণতিতে আফগান-মার্কিন সম্পর্ক তথা এ অঞ্চলের পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে- তাই ভাবিত করে তুলেছে সংশ্লিষ্ট সবগুলো পক্ষকে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫০৬ ঘণ্টা, ১২ মার্চ, ২০১২