ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আফ্রিকার প্রথম মসজিদ!

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
আফ্রিকার প্রথম মসজিদ!

মিসরবাসীর মুক্তিদাতা হিসেবে যাকে বলা হয় তিনি হলেন হজরত আমর ইবনুল আস (রা.)। তার নাম অনুসারে ৬৪১-৬৪২ খ্রিস্টাব্দে মিসরের নতুন স্থাপিত রাজধানী ফুসতাতের কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয় একটি মসজিদ।

এটি ছিল আফ্রিকায় স্থাপিত প্রথম মসজিদ। শতাব্দীব্যপী পুনর্গঠনের কারণে মূল মসজিদটি বর্তমানে উপস্থিত নেই। তবে বর্তমান মসজিদটি পুরনো কায়রোর গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এটি আমর মসজিদ নামেও পরিচিত। পুরো নাম আফ্রিকার প্রথম আমর ইবনুল আস মসজিদ।

প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী মসজিদটির নির্মাণস্থল একটি পাখির কারণে নির্বাচিত হয়। খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর আদেশে আমর ইবনুল আস (রা.) মিসর বিজয় করেন। তৎকালীন রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়া আক্রমণের পূর্বে আমর (রা.) নীল নদের পূর্ব পাশে শিবির স্থাপন করেন। একটি পাখি এসময় তার তাবুতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। তাই সেই তাবুটি গুটিয়ে নেয়া থেকে তিনি বিরত থাকেন। বিজয়ী হওয়ার পর নতুন রাজধানী গড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে তিনি সেই তাবুর স্থানকেই রাজধানীর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাই নতুন শহর ফুসতাত বা মিসর আল ফুসতাত (তাবুর শহর) নামে পরিচিত পায়। পরে মসজিদও একই স্থানে নির্মিত হয়। এই মসজিদটির নাম দেয়া হয় আমর ইবনুল আস মসজিদ।

মসজিদের মূল কাঠামো ছিল আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য ২৯ মিটার ও প্রস্থ ১৭ মিটার ছিল। ছাদ ছিল নিচু ও এর নির্মাণে পাম গাছের খুটি, পাথর ও মাটির ইট ব্যবহার করা হয়। ছাদ পাম পাতা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। মেঝেতে পাথর বিছানো থাকত। মসজিদটি আমর ইবনুল আসের সেনাবাহিনী এতে নামাজ পড়ার মতো বড় ছিল। এ সময় তাতে কোনো মিনার ছিল না।

৬৭৩ সালে গভর্নর মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ আল আনসারি মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন। এসময় মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার যুক্ত করা হয় এবং মসজিদের আকার দ্বিগুণ করা হয়। ৬৯৮ সালে গভর্নর আবদুল আজিজ ইবনে মারওয়ান পুনরায় মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। ৭১১ সালে এতে মেহরাব যুক্ত করা হয়। ৮২৭ সালে গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে তাহির মসজিদের আরো সম্প্রসারণ করান। এসময় তা বর্তমান আকারে পৌঁছায়।

নবম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কিছু অংশ যোগ করেন। এসময় মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১২০ মিটার ও ১১২ মিটারে পৌঁছায়।

ফাতেমীয় যুগে মসজিদের পাঁচটি মিনার ছিল। চারকোণের চারটি ছাড়াও বাকি একটি মিনার ছিল মসজিদের প্রবেশপথে। তবে বর্তমানে এসব মিনার নেই। বর্তমান মিনারগুলো ১৮০০ সালে মুরাদ বে নির্মাণ করেন। এছাড়াও ফাতেমীয় খলিফা আল মুসতানসির বিল্লাহ মেহরাবে রূপার বেল্ট যুক্ত করেন। ফুসতাতে অগ্নিকাণ্ডের পর পুনঃনির্মাণের সময় সালাহউদ্দিন তা মেহরাব থেকে বাদ দিয়েছিলেন।

১১৬৯ সালে অগ্নিকাণ্ডে ফুসতাত শহর ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিশরের উজির শাওয়ার ক্রুসেডারদের হাতে শহরের পতন ঠেকাতে আগুন লাগিয়েছিলেন। ক্রুসেডারদের প্রতিহত করার পর নুরউদ্দিন জঙ্গির সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। সালাহউদ্দিন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে মসজিদ পুনঃনির্মাণ করেন।

১৪শ’ শতাব্দীতে বুরহানউদ্দিন ইবরাহিম আল মাহালি মসজিদের সংস্কারের জন্য অর্থ দান করেন। একটি ভূমিকম্পের পর ১৩০৩ সালে আমির সালার মসজিদ সংস্কার করেন।

১৮শ’ শতাব্দীতে অন্যতম মামলুক নেতা মুরাদ বে কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ারর কারণে মসজিদ পুনঃনির্মাণ করেন। ১৮৭৫ সালে পুনরায় মসজিদ সংস্কার করা হয়। দ্বিতীয় আব্বাস হিলমির শাসনামলেও মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ১৯৮০ এর দশকে প্রবেশপথ পুনঃনির্মাণ করা হয়।

বর্তমানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্তী মসজিদটি দেখতে আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘন্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।