ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণতি

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৬
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণতি

আত্মীয় বলতে আমরা বুঝি আপন লোকজনকে। এক বংশ ও রক্ত যার শরীরে বহমান তিনিই রক্ত সম্পর্কের আপনজন।

আবার কুটুম্বিতার দরুনও আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক কাছের ও দূরের বিভাজনে বিভক্ত। তবে, আত্মীয়স্বজন বলতে আমরা বুঝি আত্মিক সম্পর্ক, যিনি আমার সুখে সুখী, আমার দুঃখে দুঃখী, তিনিই আমার আত্মীয়। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিধান। এ সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গোনাহ। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীর জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যেমন রয়েছে পুরস্কার, তেমনই এ সম্পর্ক ছিন্নকারীর জন্য রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি।

ইসলাম আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর প্রতি কঠিন শাস্তি ও আজাবের কথা ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের বিষয়ে বলা হয়েছে-

আল্লাহর অভিসম্পাতপ্রাপ্ত হবে
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের নিন্দা করেছেন এবং তারা মহান রবের অভিসম্পাতপ্রাপ্ত হবে বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর (ইবাদত করার) দেওয়া প্রতিশ্রুতির পর তা লঙ্ঘন করে, আর (আত্মীয়তার) সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস। ’ -সূরা আর রাদ: ২৫

তার নেক আমলসমূহ কবুল হবে না
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর নেক আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন না। আদম সন্তানের আমল সপ্তাহে একদিন আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আল্লাহতায়ালা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমলগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমল (সপ্তাহের) প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর কোনো আমল কবুল করা হয় না। ’ -আহমাদ: ২/৪৮৪

জান্নাতে প্রবেশ করবে না
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর কঠোর শাস্তি সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিসে বর্ণনা এসেছে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে মহানবী ঘোষণা দিয়েছেন। হজরত যুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি পাবে
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি শুধু আখেরাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জগতেই শাস্তি পেতে হবে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুনিয়াতে যে (দুই) অপরাধের শাস্তি আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত দ্রুত কার্যকর করে থাকেন এবং আখেরাতেও এর শাস্তি অব্যাহত থাকবে, সে দু’টি অপরাধ হলো- ইসলামি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। -জামে তিরমিজি 

আল্লাহতায়ালা সম্পর্ক ছিন্ন করবেন
কেউ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে আল্লাহতায়ালাও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি রহমান। আমি আত্মীয়তার জন্য আমার নাম থেকে একটি নাম বাছাই করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব। ’ –সুনানে আবু দাউদ

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।