ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ উক্তিটি হাদিস নয়

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ উক্তিটি হাদিস নয় ছবি: সংগৃহীত

সমাজে প্রচলিত একটি ভুল উক্তি হলো- ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।’ আরও মারাত্মক বিষয় হলো- এ কথাকে হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া। ইসলামি শরিয়ত এমন কথাকে সমর্থন করে না। এমন উক্তির কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

সমাজে প্রচলিত একটি ভুল উক্তি হলো- ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত। ’ আরও মারাত্মক বিষয় হলো- এ কথাকে হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া।

ইসলামি শরিয়ত এমন কথাকে সমর্থন করে না। এমন উক্তির কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এটা কারা আবিষ্কার করেছে, তাও অজানা।

অনেক বক্তা কিংবা আলোচক স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক বা স্বামীর আনুগত্য বিষয়ে কথা বলতে যেয়ে ওপরের কথাকে হাদিস হিসেবে পেশ করে থাকেন। কিন্তু এমন শব্দ বা বাক্যে কোনো হাদিসে পাওয়া যায় না। সুতরাং এটাকে হাদিস হিসেবে বলা যাবে না।

তবে হ্যাঁ, অনেক হাদিসে স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য জরুরি। এ বিষয়ক বর্ণনা পাওয়া যায়। মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেমসহ হাদিসের বেশ কিছু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, একবার এক নারী সাহাবি রাসূলের (সা.) কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে। নবীজী (সা.) বললেন, তার সঙ্গে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সঙ্গে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তার সঙ্গে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থেকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। -মুয়াত্তা মালেক: ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩৪১ 

স্বামী-স্ত্রীর একের ওপর অন্যের প্রচুর হক রয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে মৌলিক নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্বামীদের যেমন তাদের (স্ত্রীদের) ওপর ন্যায়সঙ্গত হক রয়েছে, তেমনি তাদেরও হক রয়েছে স্বামীদের ওপর। ’ -সূরা আল বাকারা: ২২৯

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক হাদিসে বিস্তারিতভাবে স্বামী-স্ত্রীর হক তুলে ধরেছেন এবং স্বামীদেরকে স্ত্রীর হক আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এমনকি বিদায় হজের ভাষণে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করো। ’ -সহিহ মুসলিম: ১২১৮

এসব বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এর ফজিলতও বর্ণনা করেছেন।

এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে, আপন লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, স্বামীর আনুগত্য করবে- তখন সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। -সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪১৬৩

সুতরাং গুনাহের কাজ নয়, এমন বিষয়ে স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য জরুরি। কিন্তু ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এমন কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে দিয়ে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ ইসলাম সমর্থিত কাজ নয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসের কোথাও এ ধরনের বক্তব্য আসেনি। এটি একটি মিথ্যা প্রচারণা।

এমন অনেক বিষয় আছে, বচন, প্রবচন ও উক্তি আছে। যেগুলো সমাজে ইসলামের নামে চলছে; কিন্তু সেগুলো ইসলামি নয়। বরং ইসলামি শিক্ষা ও চেতনা বিরোধী বিষয়। আসলে ভেজালের পৃথিবীতে অনেক সময় ভেজাল হয়ে যায়। এভাবে রাসূলের হাদিসের নামে অনেক সময় বচন, প্রবচনও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এগুলো খুবই গর্হিত কাজ। এমন কাজের শাস্তি জাহান্নাম। তাই এসব বিষয় থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।