আর রায়েদ প্রণেতা বলেন, ‘কোনো কার্য হাসিলের লক্ষ্যে যে উৎকোচ প্রদান করা হয় তাকে ঘুষ বলে। ’
ইমাম বাইউমি (রহ.)-এর মতানুসারে, ‘সত্যকে অসত্য এবং অসত্যকে সত্য বানানোর জন্য মানুষ যা প্রদান করে তাকে ঘুষ বলে।
ঘুষের লেনদেন মানুষ নিজের স্বার্থে করে। যা সামাজিকভাবে গুরুতর অপরাধ। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে তা ভয়াবহ পাপ। ঘুষের লেনদেনকে ইসলাম কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয় না। কেননা, ঘুষ গ্রহণ করা মানে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাত করা। যা হারাম।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালাতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একজন অপরজনের ধনসম্পদ অবৈধভাবে গ্রাস করো না। মানুষের ধন সম্পদের কিছু অংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারককে ঘুষ দিও না। ’ –সূরা আল বাকারা: ১৮৮
ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দু’টিই অন্যায়। তাই ইসলাম দু’জনকেই সতর্কবাণী প্রদান করেছে। হজরত নবী করিম (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুষ গ্রহণকারী, ঘুষদাতা এবং উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারীকে অভিশাপ করেছেন। হাদিসের ভাষ্যমতে এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া অবশ্যই অন্যায় এবং ঘৃণিত কাজ। যা কোনো আদর্শ সমাজে চলতে পারে না।
অন্য আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষখোরের প্রতি আল্লাহর অভিশাপের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘুষখোর এবং ঘুষদাতার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। –তাহাবি
যে কাজের প্রতি আল্লাহ এবং তার রাসূলের অভিশাপ রয়েছে সে কাজ এবং যারা সে কাজ করে তারা কখনও ভালো মানুষ হতে পারে না। হতে পারে না আদর্শময়। হাদিসে তাদের জন্য জাহান্নামের কথা উচ্চারিত হয়েছে এভাবে, ‘ঘুষদাতা এবং ঘুষখোর উভয়ই জাহান্নামি। ’ –তাবারানি
এখানে ঘুষ লেনদেনকারীদের জাহান্নামি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে তাদের ঘৃণিত কার্যাবলীর কারণে।
ঘুষের কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বাধাঁগ্রস্থ হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ ঘুষের মাধ্যমে চলে যায়। ঘুষদাতা এবং গ্রহীতা উভয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ঘুষ গ্রহণকারী বিনাশ্রমে অতিরিক্ত টাকা পেয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে লিপ্ত হয়। অনেকে তো বলেন, অস্ত্র ঠেকিয়ে অর্থ আদায় আর ফাইল আটকিয়ে টাকা গ্রহণে কোনো পার্থক্য নেই, পদ্ধতির প্রভেদ ছাড়া।
অভিজ্ঞদের মতে, সমাজকে এগিয়ে নিতে সর্বাগ্রে ঘুষের লেনদেন চিরতরে বন্ধ করতে হবে। কেননা, সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘুষের লেনদেন ছড়িয়ে পড়লে সে সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তাই, আদর্শ সমাজ বিনিমার্ণে ঘুষের লেনদেনকে অবশ্যই না বলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এমএইউ/