শিউলি, রসুনারা, মলিনা, মহর, রুবেল, কমল ভরদুপুরে ধুলোয় লুটোপুটি হয়ে খিলখিল করে হাসছিল। আধ ন্যাংটো সকলের চোখমুখ ধুলোয়-ঘামে অদ্ভুতুড়ে।
‘তোমরা স্কুলে যাও না’ এ প্রশ্নে সবার সমস্বর জবাব ‘না যাই না, আমগোর স্কুল নাই, বই নাই, খাতা নাই, স্কুলে যামু ক্যামনে?’। উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্নও ছুড়ে দেয় তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু শিউলি আর রসুনারা নয় যমুনায় জেগে ওঠা চরের প্রজাপতি ও বিশরশি গ্রামের কোনো শিশুই স্কুলে যায় না। যাবেই বা কীভাবে? সেখানে তো কোনো স্কুলই নেই।
বিশাল যমুনা নদী মূল জনবসতিপূর্ণ ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এ গ্রাম দুটিকে। এ অজুহাতে সরকারের শিক্ষা বিভাগেরও কোনো উন্নয়ন ছোঁয়া লাগেনি এখানে।
জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার গুঠাইল বাজার থেকে দেড় ঘণ্টার পথ নৌকায় পেরিয়ে পৌঁছতে হয় প্রজাপতি ও বিশরশি গ্রামে। আর শুকনো মৌসুমে এ পথ পেরোতে সময় লাগে অনেক বেশি। তখন ২৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে তারপর নৌকায় নদী পেরিয়ে পৌছতে হয় নিভৃত এ অঞ্চলে।
যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে ১০-১৫ বছর আগে গড়ে ওঠে প্রজাপতি আর বিশরশি গ্রাম। গ্রাম দুটিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৩ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮শ’। এখানে স্কুল-মাদ্রাসা কোনোটিই নেই। নেই কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামের মানুষের শিক্ষা আর স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা গ্রামের মসজিদের ইমাম মৌলানা ইমান আলী। তিনি এখানকার শিশুদের আরবি হরফে কাইদা, ছিবারা পড়ান আর অসুখ-বিসুখ হলে ঝাড়ফুঁক দেন।
শুধু প্রজাপতি আর বিশরশি নয় যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরের মুনিয়া, সাপধরি, চেঙ্গালিয়া, জিগাতলা, বরুল, চর বরুল, বীরনন্দনের পাড়া এলাকায়ও শিক্ষার অবস্থা কমবেশি একই রকম।
এ বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান শিশু সাংবাদিকদের জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দুর্গম চরের প্রজাপতি ও বিশরশি গ্রামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে মিম, সাদিয়া, জর্জিনা, চাঁদনী, পাপড়ি, জুবায়ের, শোভন, শাহেদ, মাহমুদুল, আতিক