ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সৈয়দপুরের ‘চিনি মসজিদ’

নূর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১২
সৈয়দপুরের ‘চিনি মসজিদ’

উপমহাদেশে সুফী সাধকদের প্রেরণাতেই এক সময়ে মুসলিম শাসন ও মোগল আমলে বহু মসজিদ গড়ে উঠে। ধর্ম প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি মুসলিম সাধকরা শিল্প-সুষমা মণ্ডিত অসংখ্য উপসনালয়ও (মসজিদ) তৈরি করেন।

এমনি একটি উপাসানালয় নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে ১৮৬৩ সালে তৈরি ঐতিহাসিক ‘চিনি মসজিদ’। প্রথমে এটি ছিল একটি দোচালা টিনের ঘর। পরবর্তীতে ১৯২০ সালে ইমাম হাজী হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে মসজিদের ৩৯x৪০ ফুট আয়তনের পাকাঘর নির্মাণ করা হয়। এর নকশা তৈরি করেন হাজী করিম নিজেই। ১৯৬৫ সালে এর দ্বিতীয় অংশটিরও নির্মাণ শেষ হয়।

এসময় কলকাতা থেকে ২৪৩টি শংকর মর্মর পাথর এনে মসজিদে লাগানো হয়। মসজিদের স¤পূর্ণ অংশ চীনামাটির টুকরা দিয়ে আবৃত করতে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি মসজিদে ২৫ মেট্রিক টন চীনামাটির পাথর দান করে। এই পাথরেই মোড়ানো হয় মসজিদের ৩২টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ। নির্মাণ করা হয় উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি ফটক। মসজিদের গোটা অবয়ব ঢেলে সাজানো হয় রঙিন চকচকে পাথরে। মসজিদের বারান্দা বাঁধানো হয় সাদা মোজাইকে।

দেয়াল জুড়ে চীনামাটির পাথরেই আঁকা হয় নানান সুদৃশ্য নকশা। স্থানীয়রা জানান, মসজিদের পুরো অংশ চীনামাটি দিয়ে তৈরি বলে এর নাম হয় ‘চিনি মসজিদ’। মসজিদকে ঘিরে আছে নানা কাহিনী। এর অনন্য নকশা আর স্থাপত্য শৈলীর কারণে এটি আকৃষ্ট করেছে শিল্প বা স্থাপত্য সমঝদারদেরকেও।

মসজিদটি নিছক উপাসনালয়ই নয়, নয়নাভিরাম স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও সমান আকর্ষণীয়, তেমন ধর্মানুরাগী মুসলমানদের মনেও মসজিদের আবহ সঞ্চার করে এক দারুণ আধ্যাতিœক অনুভূতি। দৃষ্টি মনোহর ও ঐতিহ্যমণ্ডিত মসজিদটির দ্বিতীয় তলায় পর্যটকদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ফলে প্রতিবছরই দেশ-বিদেশের উলে¬খযোগ্য সংখ্যক পর্যটক, প্রথিতযশা ব্যক্তি ঘুরে আসেন এ মসজিদ। এ পর্যšত দেশের দু’জন রাষ্ট্রপ্রধানও পরিদর্শন করেন এ মসজিদ।

মসজিদটি সম্প্রসারণের দাবি উঠলেও এর বাঁয়ে একটি ইমামবাড়া, ডানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমে গা ঘেঁষে খ্রিস্টিয় সম্প্রদায়ের কবরস্থান আর পূর্বে পাকা সড়কের কারণে মসজিদটি সম্প্রসারণের সুযোগ সীমিত। তবে এরই মধ্যে ডানদিকে কিছুটা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ধর্মানুরাগী ও বিচক্ষণ আবদুল করিম এলাকায় নির্মাণ করেন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। নিঃসন্দেহে  ‘চিনি মসজিদ’ এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে রেখেছে অনন্য ভুমিকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১২
সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।