এক চাষা মাটির কিছু পাত্র নিয়ে যাচ্ছে। তার অজান্তে একটা পাত্র পথের পাশে পড়ে গেল।
মাছি তাকিয়ে দেখল, পাত্রটি শূন্য। তারপর সে ভেতরে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর একটি ডাঁশা মশা উড়ে এসে বললো, ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমি আছি। ’ ভন-ভন করে উড়ে এসে মাছি বললো, ‘তুমি কে?’
খুব খুশি-খুশি ভাব নিয়ে মশা বললো, ‘আমি পোঁ-পোঁ। ’
‘ভালোই হলো, এসো না আমরা একসঙ্গে থাকবো?’
মশাটি ভিতরে উড়ে এলো এবং তারা দু’জনেই ছোট্ট মাটির পাত্রকে তাদের বাসা বানালো। এরপর সেখানে এক ইঁদুর দৌঁড়ে এলো। ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমরা আছি। ’ মাছি ভন-ভন করে, মশা পোঁ-পোঁ করে বলল, ‘তুমি কে হে?’
খুব খুশি-খুশি ভাব নিয়ে ইঁদুর বললো, ‘আমি কিঁচ-কিঁচ। ’
‘ভালোই হলো, এসো না আমরা একসঙ্গে থাকবো?’
ইঁদুরটি হামাগুঁড়ি দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল। তারপর তারা তিনজনই সেখানে তাদের বাসা বানিয়ে থাকতে লাগলো।
এরপর লাফাতে-লাফাতে সেখানে এলো এক ব্যাঙ। ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমরা আছি। ’ মাছি ভন-ভন করে, মশা পোঁ-পোঁ করে, ইঁদুরটি কিঁচ-কিঁচ করে বললো, ‘কিন্তু তুমি কে?’
‘ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ। ’ খুব খুশি-খুশি ভাব নিয়ে জবাবে বললো ব্যাঙ।
‘ভালোই হলো, এসো না আমরা একসঙ্গে থাকবো?’
ব্যাঙটা লাফিয়ে ঘরে ঢুকলো। তারপর তারা চার জনই সেখানে তাদের বাসা বানিয়ে থাকতে লাগলো।
এরপর সেখানে একটা খরগোশ দৌঁড়ে আসলো। পড়ল। ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমরা আছি। ’ মাছি ভন-ভন করে, মশা পোঁ-পোঁ করে, ইদুঁর কিঁচ-কিঁচ করে ব্যাঙ ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ করে জবাবে বললো, ‘তুমি কে?’
‘আমি পিপ-পিপ। ’ খুব খুশি-খুশি ভাব নিয়ে বললো খরগোশ, ‘তোমরা আমাকে চিনতে পারো। আমি শুধু চলতে থাকি, আমার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। ’
‘ভালোই হলো, এসো, আমরা একসঙ্গে থাকবো?’ খরগোশ লাফিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল। তারপর তারা পাঁচজনই সেখানে তাদের বাসা বানিয়ে থাকতে লাগলো।
তারপর এক শেয়াল সেখানে দৌঁড়ে এলো, ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমরা আছি। ’ মাছি ভন-ভন করে, মশা পোঁ-পোঁ করে, ইদুঁর কিঁচ-কিঁচ করে ব্যাঙ ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ করে আর খরগোশ পিপ-পিপ করে জবাবে বললো, ‘তুমি কে?’
‘আমি কুঁই-কুঁই। ’ খুব খুশি-খুশি ভাব নিয়ে শেয়াল বললো, ‘তোমরা আমাকে নিশ্চয় চিনতে পারবে? আমার স্বর খুব মিষ্টি, আমি ঘেউ-ঘেউ করি না, কামড়াই না। ’
‘ভালোই হলো, এসো, আমরা একসঙ্গে থাকবো?’ সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালটি সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লো। তারপর তারা ছয়জন একসঙ্গে মাটির পাত্রে থাকতে লাগলো।
এরপর দৌঁড়তে-দৌঁড়তে সেখানে এক নেকড়ে এসে উপস্থিত হলো। ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমরা আছি। ’ মাছি ভন-ভন করে মশা, পোঁ-পোঁ করে, ইঁদুর কিঁচ-কিঁচ করে, ব্যাঙ ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ করে, খরগোশ পিপ-পিপ করে, শেয়াল কুঁই-কুঁই করে জবাবে বললো, ‘তুমি কে?’
‘আঁউ-আঁউ। ’ খুব খুশি-খুশি ভাব নিয়ে জবাবে বললো নেকড়ে, ‘তোমরা আমাকে নিশ্চয়ই চিনতে পারবে? দৌঁড়ানোর সময় আমি থামি না। আমি আমার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। ’
‘ভালোই হলো, এসো, আমরা একসঙ্গে থাকবো?’ তখন নেকড়েও ভিতরে ঢুকে পড়লো এবং পাত্রের ভিতর তারা সাতজনই বাসা বানিয়ে থাকতে লাগলো।
আরাম আয়েশেই ওদের দিন কাটতে লাগল। কিন্তু একদিন এক ভালুক দৌঁড়ে যাচ্ছিল এক বন থেকে আরেক বনে। যেতে-যেতে দেখে একটি মাটির পাত্র পড়ে আছে রাস্তার পাশে। মাটির পাত্রটির পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো ভালুক। ‘আরে! এ যে জানালা বন্ধ করা মাটির ছোট্ট ঘর। এখানে কেউ কি থাকে? ও হে! ভেতরে কি কেউ আছো?’
‘আমরা আছি। ’ মাছি ভন-ভন করে মশা, পোঁ-পোঁ করে, ইঁদুর কিঁচ-কিঁচ করে, ব্যাঙ ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ করে, খরগোশ পিপ-পিপ করে, শেয়াল কুঁই-কুঁই করে, নেকড়ে আঁউ-আঁউ করে বলল, ‘তুমি কে?’
‘আমি গাঁউ-গাঁউ। ’ বেশ খুশি-খুশি ভাব নিয়ে ভালুক বললো, ‘তোমরা আমাকে নিশ্চয়ই চিনতে পারবে। আমি তোমাদের যাকেই ধরবো সেই মরবে। ’ বলেই ভালুকটি মাটির পাত্রের উপর ধপাস বসে পড়লো।
আর যায় কোথায়? মাটির পাত্রটি গেল ভেঙে। টুকরো-টুকরো হয়ে গেল। না-না, চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেল। সাত বন্ধু এমন ভয় পেল যে, যে যেদিকে পারলো পড়িমরি ছুটে পালালো। (রাশিয়ার লোককাহিনী)