একজন ব্যবসায়ীর একটি তোতা পাখি ছিলো। সে মিষ্টি কণ্ঠে গান শোনাতো, আর ব্যবসায়ী মুগ্ধ হয়ে শুনতেন।
ওই ব্যবসায়ী একদিন ঠিক করলেন, ভারত ভ্রমণে যাবেন। তিনি তার ছেলে, মেয়ে, চাকর, চাকরানী সবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের জন্য কি কি আনবো বলো?’
সকলেই তাদের পছন্দ অনুযায়ী কিছু না কিছু আনতে বললো।
ব্যবসায়ী অবশেষে গেলেন তার প্রিয় তোতাপাখিটির কাছে। ‘পাখি বলো তো তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো?’ পাখিটি বললো, ‘আমার তেমন পছন্দ নেই। তবে তোমার কাছে একটি জিনিস চাইবো। তা হলো, তুমি ভারত গিয়ে সেখানকার তোতাদের কাছে আমার বর্ণনা দেবে। বলবে, আমি খাঁচায় বন্দি আছি। তারা যেনো আমাকে স্মরণ রাখে। তারা আমাকে স্মরণ করলে আমিও আনন্দিত হবো। ’
ব্যবসায়ী পাখিকে বিদায় জানিয়ে ভ্রমণে বের হলেন।
ভারতে এসে ব্যবসায়ী প্রথমে তার ব্যবসার জরুরি কাজগুলো সারলেন। তারপর বাড়ির সকলের পছন্দের জিনিষগুলো কিনলেন। তারপর চলে এলেন তোতাপাখিদের খোঁজে। ভারতের বিশাল বন। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি।
তোতাপাখিদের দলের কাছে এসে ব্যবসায়ী বলতে লাগলেন- ‘আমার বাড়িতে খাঁচায় বন্দি একটি তোতা আছে। সে তোমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সে তোমাদের বলেছে, তোমরা যেনো তার খোঁজ রাখো। তোমরা তার খোঁজ নিলে সে আনন্দিত হবে। ’
ব্যবসায়ীর কথা শেষ হওয়া মাত্রই দলের একটি পাখি ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে মারা গেলো। ব্যবসায়ী হতবাক। একি হলো! নিশ্চয় খাঁচায় বন্দি তোতার শোকে সে মারা গেলো। ব্যবসায়ী এ ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি শোকাহত মন নিয়ে নিজের দেশে ফিরে এলেন।
বাড়ির সবাইকে সব পছন্দের জিনিষগুলো দিয়ে তোতার কাছে গেলেন। তোতা ব্যবসায়ীকে দেখে নড়ে চড়ে উঠলো। ‘কি খবর? তোতা পাখিদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি?’
ব্যবসায়ী বুঝতে পারছিলেন না, দুঃখের সংবাদটা তোতাকে দেবেন কি না? তবুও তিনি বললেন, ‘তোমার কথা শুনে একটি তোতা ডানা ঝাঁপটে তাৎক্ষণিক মারা গেল। ’
ব্যবসায়ীর কথা শুনে বন্দি তোতাটিও ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে মারা গেলো। ব্যবসায়ী ব্যাপারটা এমন ঘটবে বুঝতে পারেননি। তিনি বেশ দুঃখ পেলেন। ‘আহারে পাখিটি অন্য পাখির মৃত্যু সংবাদ শুনে শেষে নিজেও মারা গেলো। ’
মৃত পাখিটিকে খাঁচা থেকে বের করে ফেলে দিতে গেলেন ব্যবসায়ী। ফেলে দেওয়ার মুহ‚র্তেই মৃত পাখিটি হঠাৎ উড়াল দিলো মুক্ত আকাশে। একি! পাখিটি তবে মারা যায়নি? ব্যবসায়ী বোকা হয়ে গেলেন।
পাখিটি উড়াল দিয়ে একটি উঁচু ডালে বসে ব্যবসায়ীকে বললো, ‘আপনিই তো আমাকে মুক্তির পথ বলে দিলেন। আপনি আমাকে যে শোক সংবাদ দিয়েছেন, তা ছিলো আমার জন্য শুভ সংবাদ। কারণ, বনের পাখিগুলো আমার অবস্থা শুনে ডানা ঝাঁপটে মারা যাওয়ার অভিনয় করে আমাকে এটাই জানিয়ে দিলো যে, স্বাধীনতা পেতে হলে মৃতের অভিনয় করতে হবে। আমিও তাই মৃতের অভিনয় করে খাঁচা থেকে মুক্তি পেলাম। ’
(জালালউদ্দিন রুমীর মাসনাভীর গল্পের ভাব অবলম্বনে)
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর