ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে মালালার কথা জেনে গেছো। তবু আজ তোমাদের কিশোরী মালালার গল্প শোনাব।
১৪ বছরের কিশোরী মালালা। জন্ম পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায়। এবয়সেই পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে শান্তি পুরস্কার পেয়েছে সে। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কিডস রাইটস ফাউন্ডেশনের ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস পিস প্রাইজ’ এর জন্যও মনোনীত করা হয়েছে তাকে।
মালালা ইউসুফজাই তার পুরো নাম। যেমন বুদ্ধিমতী, তেমন সাহসী। লেখাপড়ায় ভীষণ আগ্রহ। যে কোন মূল্যে পড়াশোনা করতে চায় সে। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সে নারী শিক্ষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছিল। আর সেটাই তার জন্য কাল হল।
সম্প্রতি তালেবান জঙ্গিদের গুলিতে আহত হয় মালালা। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন চিকিৎসাধীন। অস্ত্রপচার করে গুলি বের করা হয়েছে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেও মালালার জীবন এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছে। আর তার মাথার উপর ঝুলছে তালেবানের মৃত্যু হুমকি ।
কিন্তু বন্ধুরা যে বয়সে মালালার হেসে-খেলে জীবন কাটানোর কথা, সে বয়সে কেন সে তালেবান জঙ্গিদের রোষানলে পড়ল? এসো, আমরা এর পেছনের কলুষিত এক ইতিহাস জানি।
মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই সোয়াত উপত্যকায় একটি বেসরকারি স্কুল চালাতেন। আনন্দে-দু:খে মালালাদের জীবন ভালোই কাটছিল। কিন্তু একটি নিষেধাজ্ঞাই মালালার জীবন পাল্টে দেয়। ধাবিত করে আন্দোলনের দিকে। ২০০৭ সালে এই উপত্যকায় তালেবান জঙ্গিরা নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ করে। বন্ধ হয়ে যায় মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া। তালেবানদের চাপানো এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি ছোট্ট মালালা। এর প্রতিবাদে সংগ্রামী হয়ে ওঠে সে। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে প্রচারণা চালায়। রোষানলে পড়ে তালেবানদের। এর পরিনতি হিসেবেই তালেবান জঙ্গিদের হামলার শিকার হয় মালালা।
তোমাদেরই একজন বন্ধু, কী সাহসী! ২০০৯ সালে বিবিসি উর্দুতে তার জীবনযাপন নিয়ে লেখালিখির সুবাদে সবার নজরে আসে। সে এখানে লিখত ‘গুল মাকাই’ ছদ্মনামে।
রাজধানীর ইসলামাবাদের উত্তর-পশ্চিমে সোয়াত উপত্যকার মিংগোরা শহরে গত ৯ অক্টোবর স্কুলবাসে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এ হামলায় মালালা গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আহত হয় তার আরও দুই সহপাঠী। নারীশিক্ষা অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনকারী মালালাকে এখন তুলনা করা হয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কিশোরী জোয়ান অব আর্কের সঙ্গে, খুদে ঝাঁসির রানির সঙ্গে। ম্যাডোনা ওকে নিয়ে গান গায়, সারা বিশ্ব ওর বন্দনায় রত। পারমানবিক অস্ত্রের এই যুগে শান্তির খুদে মডেলে পরিনত হয়েছে মালালা।
পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত না হলেও বর্তমানে মালালার অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তোমরা তার জন্য খুব করে দোয়া কর। আর তোমাদের বলছি, চাপিয়ে দেয়া কোন সিদ্ধান্ত না মেনে মালালার মত সাহসী হয়ে এগিয়ে যাও, জয় একদিন হবেই হবে!
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১২
সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি