সাকি ঢাকা এসেছে ঈদের কেনাকাটার জন্য। দীর্ঘদিন বড় আপু আর ভাইয়া ঢাকায় থাকলেও আসা হয়নি।
আপু থাকে ধানমন্ডিতে। তারা যাচ্ছে আসাদগেটের আড়ং-এ। সাকির ইচ্ছে ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি তার বৃত্তির টাকায় এমন কিছু কেনা, যা স্মৃতি হিসেবে থাকবে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার পর এই প্রথম সে বৃত্তির টাকা পেল। রিকশা যখন আড়ং পৌঁছল তখন একঘণ্টা পার। গৌরনদী হলে এই সময়ে কত জায়গায় বেড়ানো যেত। এতো গ্যাঞ্জামে মানুষ কেন ঢাকায় থাকে ভাবতে ভাবতে সে আপুর পেছন পেছন আড়ং এর দোতলায় চলে আসে।
এখানে কতগুলা পুতুল এক সারিতে দাঁড়ানো। সবার গায়ে নতুন জামা। রিয়ার কথা মনে পড়ল। রিয়া তাদের গৌড়নদীর বাসায় কাজ করে। বড় আপুর বয়সি। একটা নতুন জামার জন্য কত হাপিত্যেস তার। মাকে বলেছে এবার ঈদে তাকে নতুন জামা দিতেই হবে। অথচ এখানকার পুতুলগুলো নতুন জামা পড়ে। ওহ, বলাই হয়নি সাকি কিন্তু ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে।
আপু প্রথমে সাকিকে পুরো আড়ং ঘুরে দেখায়। এবার কেনার পালা। জামা আর রূপোর কিছু গহনা কিনবে ঠিক করেছে সে। এরমধ্যে একটি লালজামাও পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু আপুর কথা আর একটু দেখে নেই। আপুটা কি রকম যেন, খালি ঘুরতে পছন্দ করে! কী আর করা আপুর পেছন পেছন সেও ঘুরছে। আপু এটা দেখায় ওটা দেখায় কিন্তু সেই লাল জামাটা তার চোখ থেকে সরেনা। ইতোমধ্যে বৃত্তির টাকায় সে একটি কানের দুল কিনেছে। এবার নিশ্চয়ই আপু তাকে লালজামাটা কিনে দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপু তাকে নিরাশ করে জামাটা না কিনে বাসায় ফেরে। সাকির খুব মন খারাপ হয়। কিন্তু আপুকে বুঝতে দেয় না। সে ভাবে, ঈদের কেনাকাটা চলছে জামাটা থাকবে না। এবার প্রচ- রাগ হয় আপুর ওপর। কিছু করার নেই, প্রচ- রাগে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
আপুর ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গে সাকির। কিন্তু সে উঠবে না ঠিক করেছে। আপু কেন জামাটা কিনে দিল না! আপুর ডাকে তার মেজাজ খারাপের চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে। আপু তার কপোলে চুমু দিয়ে বলে, ‘তাকাও সাকি-পাখি। ’ আপু যখন খুব আদর করে, তখন তাকে সাকি-পাখি বলে। সাকি-পাখি ডাক তার খুব পছন্দ। তাই সাকির রাগ একটু কমে, একটু মাত্র! কিন্তু সে চোখ খুলবেনা ঠিক করে। খুলবোনা খুলবোনা করেও আপুর মায়াভরা ডাকে এক সময় চোখ খুলে। চোখের জড়তা কাটতেই আপুর হাতে আড়ং এর সেই লাল জামাটা দেখতে পায়। লাফিয়ে বিছানা থেকে ওঠে সে। আপু কখন তাকে না জানিয়ে জামাটা কিনেছিল সে হিসাব মেলাতে যায়না। খুশিতে সাকির চোখে পানি চলে আসে। সে জামাটা কেড়ে নিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরে!
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১২
সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি