চিরায়ত শিশু সাহিত্যগুলো আমরা তুলে ধরতে চাই ইচ্ছেঘুড়ির পাঠকদের জন্য। তারই অংশ হিসেবে আজ দেওয়া হলো বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের দুটি ছড়া।
খিচুড়ি
হাঁস ছিল, শজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেলে ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে “বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি। ”
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িঙের ঢং ধরি, সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে, “আমারেও ধরিলো কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?”
হাতিমির দশা দে, তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, “এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই। ”
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট।
কাতুকুতু বুড়ো
আর যেখানে যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার,
কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেও না খবরদার!
সর্বনেশে বৃদ্ধ সে ভাই যেও না তার বাড়ি-
কাতুকুতুর কুল্পি খেয়ে ছিঁড়বে পেটের নাড়ি।
কোথায় বাড়ি কেউ জানে না, কোন সড়কের মোড়ে,
একলা পেলে জোর করে ভাই গল্প শোনায় পড়ে।
বিদ্ঘুটে তার গল্পগুলো না জানি কোন দেশী,
শুনলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশী।
না আছে তার মুন্ডু মাথা, না আছে তার মানে,
তবুও তোমায় হাসতে হবে তাকিয়ে বুড়োর পানে।
কেবল যদি গল্প বলে তাও থাকা যায় সয়ে,
গায়ের উপর সুড়সুড়ি দেয় লম্বা পালক লয়ে।
কেবল বলে, “হোঃ হোঃ হোঃ, কেষ্টদাসের পিসি-
বেচ্ত খালি কুমড়ো কচু হাঁসের ডিম আর তিসি।
ডিমগুলো সব লম্বা মতন, কুমড়োগুলো বাঁকা,
কচুর গায়ে রঙ-বেরঙের আলপনা সব আঁকা।
অষ্ট প্রহর গাইত পিসি আওয়াজ ক`রে মিহি,
ম্যাও ম্যাও ম্যাও বাকুম বাকুম ভৌ ভৌ ভৌ চীহি। ”
এই না বলে কুটুৎ করে চিমটি কাটে ঘাড়ে,
খ্যাংরা মতন আঙুল দিয়ে খোঁচায় পাঁজর হাড়ে।
তোমায় দিয়ে সুড়সুড়ি সে আপনি লুটোপুটি,
যতক্ষণ না হাসবে তোমার কিচ্ছুতে নাই ছুটি।