শৈশবে স্পাইডারম্যান হতে চায়নি, এমন মানুষের দেখা মেলা ভার। এ কথা সত্য হবে, যদি কেউ অন্তত একবারের জন্য হলেও স্পাইডারম্যানের কমিক বই পড়ে থাকেন।
তোমরা কেউ কেউ নিশ্চই এখনও এই কমিক বইয়ে মশগুল হয়ে থাক। আবার কেউ মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখছো কার্টুন অথবা সিনেমা। কি ভুল বললাম?
তোমাদেরও নিশ্চই স্পাইডারম্যান হতে খুব ইচ্ছা করে। এ বাড়ির দালান থেকে ও বাড়িতে রশি ঝুলিয়ে যেতে কতই না মজা, রোমাঞ্চকর। স্পাইডারম্যান স্পাইডারম্যান খেলতে নিশ্চয় তোমাদের অনেক ভালো লাগে। তোমাদের কাছে আশ্চর্যমানব স্পাইডারম্যান তো সুপারহিরো। তাই না?
তাহলে চলো আজ তোমাদের জানাই জনপ্রিয় সুপারহিরোর এই সুপারহিরোর নানা জানা অজানার গল্প। যার জন্য তোমরা তোমাদের কল্পনার বা চিন্তার জগতে এই সুপারহিরোর মতোই হয়ে উঠতে চাও। ঠিক তো?
ব্যাটম্যান, সুপারম্যানের মতোই জনপ্রিয় আরেকজন সুপারহিরো স্পাইডারম্যান। বাংলায় বলা যায় ‘মাকড়সামানব’। মাকড়সা যেমন জাল বিস্তার করে শিকার ধরে, খাড়া দেয়াল বেয়ে উপরে ওঠে, স্পাইডারম্যানেরও কিন্তু এসব ক্ষমতা আছে।
স্পাইডারম্যানের শুরুর ইতিহাসটা চলো আগে জেনে নেই। কীভাবে তৈরি হলো তোমাদের এই সুপারহিরো?
স্পাইডারম্যান মূলত একটি কাল্পনিক কমিক চরিত্র। এর স্রষ্টা লেখক স্ট্যান লী ও কার্টুনিস্ট স্টিভ ডিটকো। স্পাইডারম্যান প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে অ্যামেইজিং ফ্যান্টাসির ১৫তম সংখ্যায়।
১৯৬০ এর দশকের যে সময়ে স্পাইডারম্যান প্রকাশিত হয়, তখন কমিক বইগুলোতে টিনএজারদের দেখানো হতো প্রধান সুপারহিরোর পার্শ্বচরিত্র হিসেবে। স্পাইডারম্যানের পিটার পার্কার এ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে চালু করেন নতুন ধারা।
পিটার পার্কার একজন সাধারণ স্কুল পড়ুয়া টিনএজার। যার মধ্যে সমবয়সীরা নিজেদের ছায়া খুঁজে পায়। সময়ের সঙ্গে পিটার পার্কার তার লাজুকতা পিছনে ফেলে স্কুল থেকে পা দেয় কলেজে। সেই সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে নানান ঝঞ্ঝাট-ঝামেলায়। কমিকে স্পাইডারম্যানকে প্রায়ই স্পাইডি, ওয়েব-স্লিঙ্গার, ওয়াল-ক্রলার বা ওয়েব-হেড নামেও ডাকা হয়।
১৯৬২ সালে ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’-এর সাফল্যের পর মারভেল কমিকসের সম্পাদক ও প্রধান লেখক স্ট্যান লী নতুন একটি চরিত্রের সন্ধান করতে থাকেন। টিনএজারদের কাছে কমিক বইয়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা তাকে একটি টিনএজ চরিত্র সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করে।
শুধু তাই নয়, অ্যামেইজিং ফ্যান্টাসিতে প্রকাশিত হবার পর থেকে স্পাইডারম্যান মারভেল কমিকসের বেস্ট সেলিং কমিকস হিসেবে চলতে থাকে।
এর জনপ্রিয়তা দেখে তখন কার্টুন নির্মাতারা সিদ্ধান্ত নেন কমিক চরিত্র থেকে স্পাইডারম্যানকে কার্টুন চরিত্রে রূপ দেওয়ার। যে কথা সেই কাজ।
স্পাইডারম্যান যখন কমিক চরিত্র থেকে বের হয়ে কার্টুনে রূপ নেয়, তখন দেখানো হয় একজন টিনএজার হিসেবে সে আঙ্কেল বেন ও আন্ট মের ঘরে বেড়ে উঠেছে। এ বয়সে থাকে বয়ঃসন্ধিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে মুখোশধারী দস্যুদের সাথে সংগ্রাম করতে হয়। তারপর অতি দ্রুতই স্পাইডারম্যানের স্রষ্টারা তাকে অতিমানবীয় ক্ষমতাবান হিসেবে দেখানো শুরু করেন।
এবার চলো জানি স্পাইডারম্যান হয়ে ওঠার কাহিনী। স্পাইডারম্যান হয়ে ওঠার কাহিনীটি খুবই চমৎকার। নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা স্কুলছাত্র পিটার পার্কার তার আঙ্কেল ব্রেন ও আন্ট মের ঘরে বেড়ে উঠছে। একদিন স্কুলের এক প্রদর্শনীতে এক তেজঃস্ক্রিয় মাকড়সার কামড়ে সে মাকড়শার মতো ক্ষিপ্রতা আর ক্ষমতা লাভ করে।
স্পাইডারম্যান অতিমানবীয় ক্ষমতায় দেয়াল বেয়ে ওঠার ক্ষমতা লাভ করে। আর স্পাইডার সেন্সের মাধ্যমে কোনো আক্রমণের আগেই বুঝতে পারে। তার বৈজ্ঞানিক দক্ষতা দিয়ে সে একটি ছোটো যন্ত্র তৈরি করে, যা দিয়ে নিক্ষেপ করা যায় আঠালো জাল।
স্পাইডারম্যান কার্টুন শুরুতে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য একটি পোশাক তৈরি করা হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় ‘স্পাইডারম্যান’। একদিন সে এক চোরকে বাধা না দিয়ে পালানোর সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে আবিষ্কার করে একই ব্যক্তি তার আঙ্কেল বেনকে হত্যা করেছে। স্পাইডারম্যান পরবর্তীতে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে এবং প্রতিশোধ নেয়। এরপর তার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে থাকে ও নিউইয়র্ক সিটিকে মুক্ত করতে থাকে নানা বিপদ থেকে।
স্পাইডারম্যান ইনটিউশনের মাধ্যমে বিপদ সম্পর্কে আগাম সংকেত পায় সবাই। প্রকাশের পরপরই এ চরিত্রটি সবারই প্রিয় একটি চরিত্রে পরিণত হয়।
স্পাইডারম্যানের প্রথম টিভি সিরিজ দেখানো হয় ১৯৬৭ সালে আমেরিকার এবিসি চ্যানেলে।
তোমরা অবশ্যই জান যে, স্পাইডারম্যান হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল সুপারহিরোর একজন। মারভেল কমিকসের ফ্ল্যাগশিপ চরিত্র এবং কোম্পানির মাস্কট হিসেবে তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হাজির করা হয়েছে। যেমন, অ্যানিমেটেড বা মোশন টিভি সিরিয়াল, সংবাদপত্র এবং একটি জনপ্রিয় মুভি সিরিজ, যার প্রথম তিন পর্বে অভিনয় করেছেন অভিনেতা টোবি ম্যাগুয়েরে।
জনপ্রিয়তার রেশ ধরে স্পাইডারম্যানকে নিয়ে পরবর্তীতে চলচ্চিত্রও বানানো হয়েছে। প্রথম চলচ্চিত্রচি বানানো হয় ২০০২ সালে। এরপর ২০০৪ ও ২০০৭ সালে আরও দুটি সিরিজ নির্মিত হয়েছে। আর তোমাদের জন্য স্পাইডারম্যান সিরিজের সর্বশেষ সিনেমা হলো ‘দি অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান’। এটা মুক্তি পেয়েছে ২০১২ সালে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিটি পর্বই কিন্তু হয়েছে বেশ জনপ্রিয়।
‘দি অ্যামেইজিং স্পাইডারম্যান’ সিনেমার গল্পে দেখা গেছে টিনএজ পিটার পার্কারের গল্প।
এখানে দেখানো হয়েছে পিটার পার্কার একেবারেই নিঃসঙ্গ, যে তার রহস্যঢাকা অতীতের ধাঁধার সামাধান করতে চায়। আর চায় হাইস্কুলের সহপাঠী স্ট্যাসির মন জিততে। পিটার তার বাবার রহস্যজনক এক ব্রিফকেস খুঁজে পায়। এই ব্রিফকেসের সূত্র ধরেই সে খোঁজ পায় বাবার পুরোনো সহকর্মী ড. কার্টিস কনোর্সের। ধীরে ধীরে পিটার তার নিজের অতিমানবীয় শক্তির অস্তিত্বও বুঝতে পারে। এই শক্তি নিয়েই সে মুখোমুখি হয় কনোর্সের, যে কিনা আসলে লোভী, হিংস্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণ একটা টিকটিকি।
এতোক্ষণ তো জানলে কল্পজগতের স্পাইডারম্যানের কথা। এখন তোমরা কল্পনার জগৎ থেকে বের হয়ে তোমাদের নিজস্ব শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে হয়ে ওঠো এক একজন ‘স্পাইডারম্যান’। আর স্পাইডারম্যানের মতো বুদ্ধি দিয়ে করো সকলের সমস্যার সমাধান। তাই এখন থেকে শুধু পোশাকের স্পাইডারম্যান না হও বুদ্ধির স্পাইডারম্যান!
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@bamnlanews24.com