ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

লাল-সবুজ পতাকা: বাংলাদেশের প্রাণ

রাজীব কুমার সাহা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৩
লাল-সবুজ পতাকা: বাংলাদেশের প্রাণ

আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সবুজ ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের মাতৃভূমির পুরোটা জুড়েই।

আর লাল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীকী রং। তাই লাল-সবুজ বাংলাদেশের প্রতীক। আমাদের জাতীয় পতাকা। এই পতাকাই বিশ্বের দরবারে পরিচয় করায় লাল সবুজে ঘেরা প্রিয় বাংলাদেশকে।

স্বাধীনতার মাস মার্চ। এ মাসেই বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিশ্বের মানচিত্রে জাতীয় পতাকাকে মাথা তুলে দাঁড় করাতে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ মার্চ পালিত হয় জাতীয় পতাকা দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও জাতীয় পতাকার আকৃতি, গড়ন, রং ও পতাকা উত্তোলনের ধরনের কিছু অনুমোদিত নিয়ম কানুন অনুসরণ করে। এবার চলো জেনে আসি আমাদের জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
potaka
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকার চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। তবে শিবনারায়ণ দাশ মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম ডিজাইনার। তার পতাকার বৃত্ত অংশে সোনালী রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত ছিল।

১৯৭০ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নম্বর (উত্তর) কক্ষে রাত ১১টার পর পুরো পতাকার ডিজাইন শেষ করেন তিনি। এই পতাকাই পরে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।

তৎকালীন ছাত্রনেতা ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন। এ জন্য ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

২৩ মার্চ, ১৯৭১ সালে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশের বাইরে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে কলকাতায় অবস্থিত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনে।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকার মাঝের মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসানের ডিজাইনে পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
potaka
পতাকা বিধি ১৯৭২ অনুসারে জাতীয় পতাকার রং হবে গাঢ় সবুজ এবং ১০ : ৬ অনুপাতে আয়তাকার। আর তাতে থাকবে সবুজ অংশের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত। লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে পতাকার মোট দৈর্ঘ্যর এক-পঞ্চমাংশ।

পতাকার বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর অবস্থান হবে পতাকার দৈর্ঘ্যরে ৯/২০ অংশ থেকে টানা লম্বের এবং প্রস্থের মাঝখান দিয়ে টানা আনুভূমিক রেখার ছেদবিন্দুতে। পতাকার সবুজ অংশ হবে গাঢ় সবুজ এবং উজ্জ্বল লাল।

এবার চলো জানি পতাকার আকার সম্পর্কে। ভবনের আকারভেদে পতাকার আকার তথা তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে ১০ফুট : ৬ফুট (৩.০মিটার:১.৮মিটার); ৫ফুট : ৩ফুট (১.৫মিটার:০.৯১মিটার); ২.৫ ফুট : ১.৫ফুট (৭৬০মিলিমিটার:৪৬০মিলিমিটার)।

মোটরগাড়িতে ব্যবহৃত পতাকার সাইজ হবে ১২.৫ইঞ্চি : ৭.৫ইঞ্চি (৩২০মিলিমিটার:১৯০মিলিমিটার)।

আর দুই দেশের মাঝে অনুষ্ঠিত কোনো বৈঠকে ব্যবহৃত টেবিল পতাকার সাইজ হবে ১০ইঞ্চি : ৬ইঞ্চি (২৫০মিলিমিটার:১৫০মিলিমিটার)।

লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক। উজ্জ্বল ঘন সবুজ তারুণ্যের উদ্দীপনা ও বিস্তৃত গ্রামবাংলার প্রতীক।

বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে মিল আছে দুইটি দেশের পতাকার। দেশ দুটি হলো জাপান ও পালাউ।

বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিবসে আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক।

আমাদের মনে রাখা আবশ্যক যে, জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও সরকারি বিধিমালা অনুসারে জাতীয় পতাকা উত্তোলন আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।