ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

নানা দেশের নানা মুখোশ

সানজিদা সামরিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৩
নানা দেশের নানা মুখোশ

মুখোশ প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য। মূলত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকেই মুখোশের সৃষ্টি।

মুখোশ প্রতিবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ারও। তবে কালক্রমে শিশু-কিশোরদের কাছে এটা হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় খেলার উপকরণে।

এসো বন্ধুরা এখন জেনে নেই মুখোশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

নানারকম ধর্মীয় উৎসব ও আচার অনুষ্ঠানে বহু আগে থেকেই মুখোশ ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন খেলাধুলা ও আত্মরক্ষার জন্যও মুখোশ পরা হতো। সময়ের পরিবর্তনে ধর্মভিত্তিক মুখোশ ব্যবহারের প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে। এখন সেগুলো শুধু নাটক, সাংস্কৃতিক  উৎসব ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনোরোগ চিকিৎসার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

নয় হাজার বছর আগে সর্বপ্রথম জেরুজালেমের ইসরায়েল মিউজিয়াম থেকে মুখোশ পাওয়া যায়।

নানা দেশের নানা মুখোশ
আফ্রিকা: আফ্রিকাতে বিভিন্ন ধরনের মুখোশের ব্যবহার রয়েছে। মুখোশগুলো মূলত ধর্মভিত্তিক। এগুলো ধর্মীয় ভাব ও গাম্ভীর্যের সঙ্গে ব্যবহার হয়। মুখোশগুলো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিল্পীরা তৈরি করেন। বিশেষ দক্ষতা, আধ্যাত্মিক চেতনা ও প্রতীকী ভাবমূর্তি থাকায় আফ্রিকান গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজে এই শিল্পীরা অত্যন্ত সমাদৃত।

ডিজল: এই মুখোশ জল নামেও পরিচিত। এটি সিয়েরা লিওনের সময়কাল থেকে নৃত্যশিল্পের আনুসঙ্গিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


নুনা: এই মুখোশ বিভিন্ন প্রাণীকে উপস্থাপন করে। আফ্রিকার বুর্কিনা ফাসোর মানুষেরা নুনাকে ধ্বংসের প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে।

মেইলের ডোগন যৌথ ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী। তারাও নানারকম প্রাণীর মুখোশ ব্যবহার করে। তাদের তিনটি প্রধান উৎসবে ৭৮ ধরনের মুখোশ প্রদর্শন করা। বর্তমানে আফ্রিকান মুখোশগুলো ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করতে তৈরি করা হয়।

ইন্ডিয়া/শ্রীলংকা/ ইন্দো-চীনা/নেপাল
এসব দেশে মহাভারত ও রামায়ণের ওপর ভিত্তি করে দেব-দেবীর আদলে মুখোশ তৈরি করা হয়। এই পৌরাণিক মুখোশ তৈরির ধরন কম্বোডিয়া, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মুখোশ শিল্পকে প্রভাবিত করে। নেপালের মুখোশ সে দেশের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবের পরিচায়ক। এখানকার তিন চোখ বিশিষ্ট সিভা মাস্ক অশুভ শক্তি বিনাশের পরিচায়ক। তারা বিশ্বাস করে এই দেবতার মুখোশের তৃতীয় চোখ খোলা থাকার অর্থ তিনি রাগান্বিত। তাছাড়াও বুদ্ধদেবের মুখোশ আলোর প্রতিমূর্তি হিসেবে আখ্যায়িত।

ইন্দোনেশিয়া:
এখানে অনেক আগে থেকেই মুখোশ নাচের উপকরণ হিসেবে প্রচলিত । তাদের ধারণা এসব মুখোশ পরে নৃত্যশিল্পীরা তাদের পারফরমেন্সের মাধ্যমে খুব সহজেই ঈশ্বরকে অভিভূত করতে পারে। এছাড়াও রয়েছে তোপেং মাস্ক ড্যান্স। এর মধ্যে রামায়ণ ও মহাভারতের আধিপত্য রয়েছে। এই নাচের বিভিন্ন শাখা রয়েছে। যেমন, তোপেং বেলী, সিরেবন, মালাং, বেটাওয়াই, ইয়োগিয়াকার্তা, ইত্যাদি। তবে তোপেং মাস্ক ড্যান্সের মধ্যে পানজি বেশ জনপ্রিয়। সলো তোপেং ড্যান্সের জনপ্রিয় স্টাইল হিসেবে বিস্তার লাভ করছে।

কোরিয়া:
কোরিয়ার ঐতিহ্যের একটি অংশ মুখোশ। তারা আগে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেকে ও ঘোড়াকে মুখোশ আচ্ছাদিত করত। ঐতিহাসিক কোনো বিষয়বস্তুকে মনে রাখার জন্য ডেথ মাস্ক ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া উৎসব, নাচ, রাজসভা, মঞ্চ নাটক প্রভৃতি অনুষ্ঠানে অশুভ শক্তির প্রতিরোধক হিসেবে তারা মুখোশ ব্যবহার করেন।

জাপান
মুখোশ বহু আগে থেকেই নাট্য পরিমণ্ডলে জনপ্রিয়। এগুলো পুরাণ ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে। সবচেয়ে পুরাতন জিজাকু মুখোশ। তবে তা বর্তমানে নাচের পরিবর্তনের ভিত্তিতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ
মুখোশ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও লোকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। অতি সাধারণ উপাদান দিয়ে এসব মুখোশ তৈরি করা হয়। যেমন: কাদামাটি, বাঁশ, কাঠ, শোলা প্রভৃতি। বাঙালি উৎসব- যেমন, পহেলা বৈশাখে মুখোশের ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভা যাত্রার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থাপন করা হয় বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। এসব মুখোশ বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিবিম্ব, প্রতিবাদের হাতিয়ার।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁচা, বাঘ, হাতি, ময়ূর, সাপ, লক্ষ্মী,কালী, ছৌ নাচের প্রতিকৃতি প্রভৃতি। মুখোশগুলো আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও প্রতীক বহন করে। যেমন- পেঁচাকে লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে মনে করা হয়, হাতি শক্তির প্রতীক। ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টিতে দেবদেবীর মুখোশ উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও কিছু নেতিবাচক প্রতিকৃতি মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সমাজের অসঙ্গতি, কুসংস্কার, অজ্ঞতাকে।

নিজেই বানাও মুখোশ:
বর্তমানে শিশুরা বেড়ে উঠছে বদ্ধ এক ঘরে। পরিকল্পিত জায়গার অভাবে তাদের বাইরে খেলাধুলার প্রবণতা যাচ্ছে কমে। সুতরাং টিভি, কম্পিউটার, ভিডিও গেইমস প্রভৃতির ওপর তারা অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। জীবনটা যেন ঘড়ির কাঁটার তো একই নিয়মে চলছে, তাই না?

এই একঘেঁয়েমি কাটাতে ঘরে বসেই বিভিন্ন কিছু তৈরি করতে পারো। খুব সহজেই তৈরি করতে পারো নিজের জন্য মুখোশ। চমকে দিতে পারো বন্ধুদের।

উপকরণ: এ-ফোর সাইজের মোটা কাগজ, পেন্সিল, রঙিন মার্কার, রং (ক্রেয়ন,ওয়াটার কালার), তুলি, গ্লিটার, গ্লু, কাচি, এলাস্টিক ও পাঞ্চ মেশিন।

ধাপ ১: প্রথমে তুমি যে মুখোশটি তৈরি করতে চাও সেটা কাগজে একে নাও। সেটা হতে পারে বাঘ, পেঁচা, বানর, বিড়াল বা যে কোনো কিছু।
ধাপ ২: এবার তোমার আঁকা ছবিটাকে পছন্দমতো রং করো। ইচ্ছে হলে বসাতে পারো চুমকি বা গ্লিটার।
ধাপ ৩: ছবিটাকে তার আকৃতি অনুযায়ী কাচি দিয়ে কেটে নাও।
ধাপ ৪: এখন মুখোশের দুপাশে পাঞ্চ মেশিন দিয়ে ছিদ্র করো।
ধাপ ৫: দুটো ছিদ্রের সঙ্গে এলাস্টিক বাঁধো।
    
এবার পরে দেখো তো কেমন লাগছে তোমাকে!

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।