ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মানুষখেকো হাঙর

মাইনুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৩
মানুষখেকো হাঙর

সমুদ্র কার না ভালো লাগে। সমুদ্রের তীরে ঢেউয়ের গর্জনে আমাদের মন নেচে ওঠে আনন্দে।

আমরা সৈকতের ধারে বালুজলে গোড়ালি ডুবিয়ে দৌঁড়াই, জলে সাঁতার কাটি, আর হাত-পা ছুড়ে মেতে উঠি জলখেলায়। এগুলো আমাদের আনন্দেরই বহিঃপ্রকাশ।

কিন্তু, আমাদের এই আনন্দ নিমিষেই মাটি করে দিতে পারে একটি শক্তিশালী হিংস্র প্রাণী হাঙর। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় শার্ক। tiger-shark

পৃথিবীর অধিকাংশ সমুদ্র সৈকতেই পর্যটকদের বড়ো আতঙ্কের নাম হাঙরের আক্রমণ। মানুষখেকো হাঙরগুলো সৈকতের কাছাকাছি জায়গায় ও‍ৎ পেতে থাকে। আর এ অঞ্চলে সাঁতাররত কিংবা জলখেলায় মগ্ন মানুষদের আক্রমণ করে।

শিকার ধরতে হাঙরের সবথেকে বড়ো সুবিধা এর শরীর। হাঙরের রয়েছে অত্যন্ত ধারালো দাঁত ও মজবুত চোয়াল। এর যকৃতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ তেল। আর এ তেলই তাকে ভেসে থাকতে ও শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে সহায়তা করে।

মানুষখেকো হাঙরগুলো সাধারণত সৈকত থেকে কয়েকশো ফুটের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে। এ অঞ্চল যে তাদের বাসস্থল, তা কিন্তু নয়। তারা এ অঞ্চলে আসে কেবল মানুষের লোভে। শিকার নাগালের মধ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা আক্রমণ করে এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করে।

কিন্তু বন্ধু, যদি কখনো এরকম একটি মানুষখেকো হাঙর তোমাকে আক্রমণ করে, তবে তুমি কী বিনা প্রতিবাদে তার খাবারে পরিণত হবে? নিশ্চয়ই তুমি এক বাক্যে বলবে ‘কখনোই না’। হ্যাঁ বন্ধুরা, আমরা কেউই তা চাইব না। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি সত্যিই যদি এসে পড়ে, তবে কী করতে হবে জেনে রাখো। bullshark

বিশেষজ্ঞদের মতে, আক্রমণ করতে আসা হাঙর দেখে ভয়ে জড়োসড়ো না হয়ে, বরং প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করতে হবে। সুযোগ বুঝে তার নাকের উপর সজোরে ঘুষি চালিয়ে দাও, আর চেষ্টা করো চোখের উপর জোরে গুঁতা দিতে। হাঙরের শরীরের এ দু’টি স্থান খুবই সংবেদনশীল। এসব স্থানে অল্প আঘাতেই এরা অনেক বেশি ব্যথা পায়। এই দুইটি স্থানেও যদি তুমি আঘাত করতে না পারো, তবে এর চোয়ালে আঘাত করো। এতেও সে পিছু হটবে। কারণ, হাঙরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা ঝামেলাপূর্ণ খাবার এড়িয়ে চলে।

কিন্তু হাঙর যদি কাউকে সত্যিই ধরে ফেলে, তখন দ্রুত বড়ো জলযান নিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে তার অবস্থান থেকে তাকে সরিয়ে দিতে হবে। এ কাজটি করার জন্য বর্তমানে সৈকতগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত থাকে। এ কাজটি করতে হয় দ্রুততার সঙ্গে। কারণ, শিকার নিয়ে হাঙরটি সরে পড়তে পারে। আর একবার মুখে শিকার নিয়ে তারা দিনে কয়েকশো মাইল ছুটতে পারে।

এতকিছু শুনে তুমি নিশ্চয়ই হাঙরগুলোকে মানুষখেকো রাক্ষস ভাবছো। কিন্তু তুমি জানলে খুশি হবে যে, সব হাঙর মানুষ খায় না। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিনশ’র বেশি প্রজাতির হাঙর রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ২০ প্রজাতির হাঙর মানুষকে আক্রমণ করে। এদের মধ্যে ১০টি হিংস্র প্রজাতির নাম তোমাকে বলছি।

১.    দি গ্রেট হোয়াইট শার্ক
২.    টাইগার শার্ক
৩.    বুল শার্ক
৪.    রিকুয়েম শার্ক
৫.    ব্লু শার্ক
৬.    স্যান্ড টাইগার শার্ক
৭.    ব্লাক টিপ শার্ক
৮.    শর্ট ফিন শার্ক
৯.    ওশেনিক ওয়াইড শার্ক এবং
১০.    ডাস্কি শার্ক

বন্ধুরা, হাঙরকে ভয় পায় না এমন লোক পাওয়া কঠিন। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে মানুষকেই হাঙরদের ভয় পাওয়া উচিৎ। কারণ, মানুষই হাঙরের সবথেকে বড়ো ঘাতক। মানুষ প্রতি বছর প্রায় ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ত্রিশ লাখ) হাঙর নিধন করে। তবে, মানুষকে হাঙর হত্যা করলে যে অপরাধ হয়, মানুষ হাঙরকে হত্যা করলে একই অপরাধ হওয়া উচিৎ। তাই না?

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banhlanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।