বাবা নিয়ে কিছু লেখা আমার জন্য কঠিন। ‘বাবা’ ছোট্ট এই শব্দটার ভেতর এমন সব আদর, মায়া-মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা লুকিয়ে আছে- যা দুনিয়ার অন্য কোথাও নেই।
১৬ জুন। একদিকে বাবা দিবস, অন্যদিকে আমার একমাত্র কন্যার জন্মদিন। মাস শেষে সামান্য কিছু টাকা আর তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে মোবাইল ওস্কাইপিতে হাই হ্যালো ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি কলিজার টুকরো মেয়েকে। এমন দুর্ভাগা বাবা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কি-না আমার জানা নেই, যে তিন বছরেও তার আদরের ধনকে কোলে নিয়ে একবার আদর দিতে পারেনি।
২০১০ সালের ১৬ জুন ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্কাইপির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছিলাম আমার আদরের ধন এনার মুখখানি।
একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন একটু বুঝতে শেখে তখন তাকে নানা বিষয়ে বোঝাতে হয়, চেনাতে হয় ও শেখাতে হয়; কিন্তু মা-বাবাকে কখনো নতুন করে চেনাতে হয় না তাকে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সে বুঝে নেয় তার আশ্রয়স্থল ও নির্ভরতার জায়গাটি। পরিবারে মায়ের যেমন ভূমিকা থাকে, বাবার ভূমিকাও কিন্তু কোনো দিক দিয়ে কম নয়। অনেক পরিবারে মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাবাই সব।
কিন্তু আমার মেয়ের জীবনটা শুরু হয়েছে একটু অন্যভাবে। বাবা কি জিনিস তা চোখে দেখেনি এখনো। আমি জানি, বিশ্বাস করি সে তার বাবার শূন্যতা অনুভব করে সারাক্ষণ।
দিন পেরিয়ে মাস, মাসের পর বছর যায় কিন্তু মেয়েকে দেখার সৌভাগ্যটুকু হয়না এই হতভাগ্য প্রবাসী পিতার। যাই, যাচ্ছি করে যাওয়া হচ্ছে না দেশে। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে হয়তা সরাসরি দেখতে পাবো মেয়েকে।
গত দুই মাস থেকে যখনই ফোন করি, মেয়েটা বারবার বলে ওঠে বাবা আগামী মাসে আমার জন্মদিন। সে হয়তো বা ঠিকমতো বুঝতেই শেখেনি আগামী মাসের মানে কি। টেলিফোনে মেয়ের মুখে যখন বাবা ডাক শুনতে পাই, তখন যেমন আনন্দে বুক ভরে যায় আবার অনুরূপ কষ্টে দু’চোখ বেয়ে আসে অশ্রু।
মাঝে মাঝে মেয়েকে নিয়ে হারিয়ে যাই রঙিন স্বপ্নের ভুবনে। মেয়ে আমার স্কুলে যাবে, ক্লাসে সেরা ছাত্রী হবে। পড়াশুনা করে দেশের জন্য কাজ করবে, আরো কত কি!
বাবা হওয়ার পর থেকেই উপলব্ধি করছি বাবা হওয়াটা একটা বিশাল দায়িত্বের বিষয়, যে দায়িত্ব পালনে আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমাকে শিখতে হচ্ছে, প্রতিনিয়ত শিখছি, বাবারা এভাবেই হয়তো বাবা হয়ে উঠে। কিন্তু আমার মতো অনেকেই পারে না বাবা নামক শব্দটির সঠিক মূল্য দিতে। জীবনে বাবার গুরুত্ব কত তা কেউ বলতে পারবে না। আমরা শুধু বাবার গুরুত্ব অনুমান করতে পারি। আমি এই ক্ষনে এসে বুঝতে পেরেছি সবার বাবা হওয়া সাজে না। বাবার মতো বাবা না হতে পারলে বাবা হওয়ার স্বপ্ন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই উত্তম।
মেয়ের তৃতীয় জন্মদিনে দেশের বহুল প্রচারিত ৪টি দৈনিকে শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন আর টাকা নামক কাগজের টুকরো ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি তাকে। তবে সারাক্ষণ মন থেকে দোয়া করি, ভালো থাকিস মা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি
মেইল: ichchheghuri@banglanews24.com