(বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
কাল্পনিক একটি সময়| বড় বড় যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবী ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত।
[পূর্ব প্রকাশের পর]
এমনকি বাচ্চারাও যদি খেলার সময় ক্যাচ মিস করে অথবা দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে যায় এবং যদি ‘রিলিজ’ শব্দটাকে এ কারণে খেলাচ্ছলেও ব্যবহার করে, তবে তাদেরও তিরস্কার করা হয়। জনের একবার এরকম হয়েছিল । সে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে চিৎকার করে বলেছিল,
যথেষ্ঠ হয়েছে এলেক্স, তোমাকে রিলিজ করা হলো।
এলেক্সের আনাড়ি ভুলের কারণে তাদের দল হেরে যায়। কোচ জনকে সাথে সাথে একপাশে সরিয়ে নিয়ে এ নিয়ে কিছু কথা শোনালো। জনের মাথা অপরাধবোধে, লজ্জায় হেঁট হয়ে গিয়েছিলো। খেলা শেষে এলেক্সের কাছে মাফ চাইতে হলো তাকে।
এখন, নদীর পাড়ের রাস্তা ধরে যখন সে সাইকেল চালাচ্ছে, ভয়ের কথা মনে হতেই তার সেই প্লেন উড়ে যাওয়ার দিনের স্পষ্ট অনুভূতির কথা মনে পড়লো। যদিও ডিসেম্বর এগিয়ে আসার সাথে যে ভয়, তা একটু ভিন্ন রকম। নিজের বোধকে ব্যাখ্যা করার জন্যে সঠিক শব্দ খুঁজে পেলোনা।
জন তার ভাষার ব্যাপারে খুবই সচেতন। তার বন্ধু এলেক্সের মতো নয়। এলেক্স কথা বলে খুব দ্রুত। শব্দ ও বাক্যাংশে জগা-খিঁচুড়ি করে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তা অস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কখনও কখনও তা হাস্যরসের পর্যায়ে চলে যায় । এই সেদিনের কাণ্ড মনে করেও জনের দেঁতো হাসি পেলো। তখন সবে মাত্র সকালের জাতীয় সংগীত অর্ধেক গাইতে পেরেছে, এলেক্স প্রচণ্ড বেগে হাঁপাতে হাঁপাতে ক্লাসে ঢুকলো। প্রতিদিনের মতোই লেট। গান শেষ করে পুরো ক্লাস যখন সিটে বসেছে, এলেক্সকে সবার কাছে ক্ষমা প্রর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হলো, এটাই নিয়ম । সে তখন হাঁপাচ্ছে আর নিয়ম বইয়ে লেখা ক্ষমা প্রার্থনার বুলি দ্রুত আউড়ে চলেছে,
শিক্ষানবিশ কম্যুনিটিকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল তার ব্যাখ্যা শোনার জন্যে। সহপাঠীরা দাঁত বের করে হাসছিল। তার এই ব্যাখ্যা তারা আগেও বেশ কয়েকদিন শুনেছে । এলেক্স হচ্ছে লেট লতিফ। প্রতিদিনই দেরি করে আসে|
আমি সঠিক সময়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু পথে যখন সাইকেল চালিয়ে হ্যাচারিটা অতিক্রম করছিলাম, দেখতে পেলাম মৎস্যকর্মীরা কিছু স্যামন মাছ আলাদা করছে। আমার ধারণা আমি তা দেখে ‘Distraught’ হয়ে গিয়েছিলাম| সহপাঠীদের কাছে আমি বিনীত ক্ষমা চাচ্ছি বলে এলেক্স থামলো।
সে তার এলোমেলো টিউনিক (কুর্তা) ঠিক করে তার জায়গায় বসলো। সাধারণ রেসপন্সের নিয়ম অনুযায়ী সবাই
একসাথে বলে উঠলো, আমরা তোমাকে ক্ষমা করলাম, এলেক্স।
বলে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা হাসি ঠেকানোর জন্যে ঠোঁট কামড়ে ধরেছিল।
আমিও তোমার ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করছি, এলেক্স, বলে শিক্ষকও মুচকি হাসলেন। আমি তোমাকে এ কারণে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, তুমি আমাদের একটি নতুন শব্দ শেখার ব্যাপারে আরেকটি সুযোগ দিলে। ‘Distraught’ শব্দটি
স্যামন দেখার ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্যে খুব শক্ত শব্দ।
তিনি বোর্ডের দিকে ঘুরলেন এবং লিখলেন,
‘Distraught’
তার পাশেই লিখলেন,
Distracted= মনোযোগ কেড়ে নেয়া, যেটা সঠিক শব্দ।
জন বাসার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দরোজার পাশে সরু স্ট্যান্ডে সাইকেলটা রেখে ভাবলো, ডিসেম্বরের ব্যাপারে তার অনুভূতির ব্যাখ্যা করার জন্যে ‘ভয়’ শব্দটা ভুল শব্দ। এটা খুব শক্ত ধরনের বিশেষণ। এবারের বিশেষ ডিসেম্বরের জন্যে জন বহুদিন অপেক্ষা করেছে। এখন যখন তা ঘাড়ের ওপর চলে এসেছে, সে ঠিক ভীত নয়; তবে......‘আকুল’ (উৎসাহী)।
সে ব্যগ্রভাবে অপেক্ষা করছিল সময়টা কবে আসবে এবং সে অবশ্যই এ ব্যাপারে উত্তেজিত। প্রকৃতপক্ষে এগারো বছর বয়সী সবাই এ দিনটির ব্যাপারে উত্তেজিত। কিন্তু কি ঘটতে পারে এই ভাবনাটা যখনই মনে আসছে, শরীরের ভেতর কেমন যেন মৃদু ভয়াতুর শিহরণ খেলে যাচ্ছে। জন ঠিক করল সে আসলে, উদ্বিগ্ন।
সান্ধ্য খাবারের পর জনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন, আজ রাতে অনুভূতির কথা প্রথমে কে বলবে?
সন্ধ্যা বেলা অনুভূতির কথা বলাটা কম্যুনিটির একটি প্রথা। কে প্রথমে বলবে এই নিয়ে সাধারণত জন এবং তার বোন মেরির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। তাদের বাবা মা-কেও এই প্রথায় অংশ নিতে হয়। সন্ধ্যায় নিজের অনুভূতির কথা বলতে হয়। কিন্তু অন্যান্য অভিভাবকদের মতো তারা তাদের টার্ন নিয়ে ঝগড়া বা চালাকি করার চেষ্টা করে না ।
আজ অবশ্য জনও কোনো বিতর্কে গেলো না। সন্ধ্যায় তার অনুভূতি ছিল খুবই প্যাঁচানো ও অস্পষ্ট। নিজের প্যাঁচানো অনুভূতির কথা বলে সে আজকের আলোচনা শুরু করতে চাইছে না। যদিও সে জানে একবার শুরু করলে তার বাবা-মা এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করবে।
মেরির দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি শুরু কর।
মেরি বয়সে তার চেয়ে ছোট| মাত্র সাত। চেয়ারে বসে কথা বলার জন্যে টগবগ করে ফুটছিল ।
মেরি ঘোষণা দিলো, আজ বিকেলে আমি খুব রাগ বোধ করেছি।
আমাদের দলটি খেলার মাঠে ছিল। সাত বছর বয়সী আরেকটি দল আমাদের ভিজিট করতে এসেছিল। তারা কোনো নিয়ম-কানুনই মানছিল না। তাদের মধ্যে একজন- যে কিনা ছেলে; আমি তার নাম জানিনা। বার বার নিয়ম ভেঙে পিছল খাবার লাইনের সামনে চলে যাচ্ছিল। যদিও আমরা সবাই লাইনে অপেক্ষা করছিলাম। রাগে আমি আমার হাত কচলাচ্ছিলাম।
মেরি তার হাত দিয়ে মুঠোর ভঙ্গি করে দেখালো। সবাই তার অঙ্গভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো। মা জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি মনে হয়? কেন ছেলেটি নিয়ম মানছিল না ?
মেরি একটু ভাবলো, তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, আমি জানিনা, তারা এমন করছিল যেন...যেন ..."
পশুদের মতো? মুচকি হেসে জন কথা জোগালো।
ঠিক বলেছ। বলে মেরিও হাসলো, ‘পশুদের মতো’।
দুটি শিশুই জানেনা শব্দটার প্রকৃত অর্থ কি। কিন্তু তারা জানে শব্দটি মাঝে মাঝে অশিক্ষিত, আনাড়ি এবং বেখাপ্পা কারো জন্যে ব্যবহৃত হয় । বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, ভিজিটর কোথা থেকে এসেছিল?
মেরি ভ্রু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করছিল, আমরা যখন স্বাগতম বার্তা জানাচ্ছিলাম আমাদের লিডার তখন বলেছিল, কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না। হতে পারে আমি মনোযোগ দিয়ে শুনিনি। তবে তারা দূরের কোন কম্যুনিটি থেকে এসেছিল। শুনেছি, অনেক সকালে তাদের রওয়ানা হতে হয়েছে এবং দুপুরের খাবার বাসে খেতে হয়েছে।
মা মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, তোমার কি মনে হয় তাদের নিয়ম-কানুন গুলো ভিন্নরকম হতে পারে? এ কারণে হয়তো তারা জানেই না তোমাদের খেলার মাঠের নিয়মগুলো কি?
মেরি কাঁধ ঝাঁকালো তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, হতে পারে।
জন জিজ্ঞাসা করলো, তুমি তো কম্যুনিটিগুলো ভিজিট করেছো, তাই না? আমাদের দল প্রায়ই করে থাকে|
লিলি আবার মাথা ঝাঁকিয়ে, "যখন আমাদের বয়স ছিল মাত্র ছয়, আমরা গিয়েছিলাম। স্কুলের পুরো একটি দিন কাঁটিয়েছিলাম তাদের কম্যুনিটির ছয় বছর বয়সীদের সাথে।
তোমার কেমন লেগেছিল, যখন সেখানে ছিলে?
মেরি আবার ভ্রু কোঁচকালো, অদ্ভুত লেগেছে । কারণ তাদের নিয়মগুলো ছিল ভিন্নরকম। তারা এমন কিছুর ব্যবহার শিখেছিল যা আমার গ্রুপ এখনও শেখেনি। নিজেদের বোকার মতো লাগছিল।
বাবা অগ্রহের সাথে শুনছিলেন এতক্ষণ|
…………………… [চলবে]
লেখক: রুবাইয়াৎ, ওয়াশিংটন ডি.সি
প্রথম পর্ব পড়তে নিচের লিংক দেখুন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি, মেইল: ichchheghuri@banglanews24.com