ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রুবাইয়াৎ-এর ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

বাহক (পর্ব ৩)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৩
বাহক (পর্ব ৩)

(বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
কাল্পনিক একটি সময়| বড় বড় যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবী ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত।

একেকটি খণ্ডকে বলা হয় ‘কম্যুনিটি’। প্রতিটি  কম্যুনিটি নিয়ন্ত্রণ করে একদল জ্ঞানী ব্যক্তি, যাদের বলা হয় ‘প্রবীণ’।   সবাইকে কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম ভাঙলেই দেয়া হয় ‘রিলিজ (মুক্তি)’। খাবার থেকে শুরু করে প্রতিদিনকার জীবনে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই তৈরি করে, প্যাকেটে ভরে, ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়। তবে কোনো কিছুই জমিয়ে রাখার নিয়ম নেই। রাখলেই  ‘রিলিজ’| মানুষের মন থেকে স্মৃতি নামের জিনিসটি মুছে ফেলা হয়েছে। যাতে করে সমাজে দুঃখ এবং কষ্ট বলে কিছু না থাকে। তবে প্রতি কম্যুনিটিতে বিশেষ একজনকে নির্বাচন করা যিনি সমস্ত স্মৃতি একা বহন করবেন এবং প্রবীণদের একজন হিসেবে কম্যুনিটিকে পরিচালন করবেন। ছেলেটির নাম জন, সদ্য কৈশোরে পা দিচ্ছে এবং সদ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে| আমরা আজ জনের গল্প শুনবো)

[পূর্ব প্রকাশের পর]

বাবা বলল, মেরী আমি এতক্ষণ আজকের সেই নিয়ম না মানা ছেলেটিকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। তোমার কি মনে হয়, নতুন জায়গায়, নতুন নিয়মে, এসে তারও হয়তো নিজেকে কিছুটা অদ্ভুত আর বোকা লাগছিল?

মেরী কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলো। অবশেষে বলল, হ্যাঁ।
ছেলেটার জন্যে আমার একটু খারাপই লাগছে। জন বলে চলেছে, যদিও আমি তাকে চিনিনা। তবে যে কেউ যখন অদ্ভুত এবং স্টুপিড অবস্থার ভেতর দিয়ে যায়, তখন তার জন্যে আমার মায়া হয়।
 
এখন তুমি কেমন বোধ করছ, বাবা জিজ্ঞাসা করল, রেগে আছো?
আমার মনে হয় না। আমার ধারণা আমি নিজেও তার জন্যে একটু দুঃখ বোধ করছি। দুঃখিত, আমি রেগে গিয়েছিলাম।

বলে দাঁত বের করে হাসলো। জনও হাসলো। মেরীর অনুভূতিগুলো সবসময়ই সাদাসিধে এবং সহজেই সমাধান করা যায়। মনে হয় সাত বছর বয়সে তার নিজেরটাও এরকমই ছিল।

বাবা যখন তার নিজের অনুভূতির কথা বলছিল জন শান্তভাবে শুনছিল। যদিও তেমন একটা মনোযোগ দিচ্ছিল না। বাবার কাজের জায়গায় নতুন একটি শিশুকে নিয়ে কিছু ঘটেছে। বাবা একজন পুষ্টিকারক। নতুন শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক চাহিদার যোগান দেয়া পুষ্টিকারকদের দায়িত্ব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। যদিও জনের এ কাজে তেমন আগ্রহ নেই।

এটা কি ছেলে শিশু নাকি মেয়ে শিশু? মেরী জানতে চাইল।
ছেলে। বাবা জানালো সে একজন মিষ্টি এবং চমৎকার ছোট্ট ছেলে শিশু। তার অঙ্গভঙ্গিগুলোও চমৎকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার যতটা বেড়ে ওঠার কথা, ততটা বাড়ছে না। ভালোকরে ঘুমও আসে না। আমরা তাকে বিশেষ যত্ন বিভাগে সরিয়ে নিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। কমিটি এরই মধ্যেই তাকে রিলিজ করে দেওয়ার কথা ভাবছে।

ওহ্ না! মা সহানুভূতির সুরে বললেন, আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা তোমার জন্যে কতোটা দুঃখজনক।
জন এবং মেরীও সহানুভূতির সুরে মাথা নাড়ালো। নতুন শিশুদের রিলিজ করাটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আফসোস তারা কম্যুনিটির জীবন উপভোগ করার সুযোগ পেলনা। অথচ তারা অন্যায় কিছুও করেনি।

শাস্তি ছাড়া কেবলমাত্র দুটি ক্ষেত্রেই রিলিজ দেয়া হয়। বুড়োদের রিলিজ, যখন একটি পুরো জীবন সাফল্যের সাথে কাটানোর জন্যে উৎসব হয়, আনন্দ হয়। নতুন জন্মানো শিশুদের রিলিজ, যখন আফসোস হয় যে কত কিছুই না ঘটতে পারতো। এটা বিশেষ করে বাবার মতো পুষ্টিকারকদের জন্যে খুবই দুঃসংবাদের ব্যাপার । তারা এটা নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখে। সৌভাগ্যবশত এরকমটি সচরাচর ঘটে না।  

যাহোক, বাবা বলে চলল, আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। তোমরা যদি কিছু মনে না কর তাহলে আমি কমিটির কাছে অনুমতি চাইব তাকে রাতে এখানে এনে রাখার জন্যে। রাতের পুষ্টিকারকরা কেমন হয় তা তো তোমরা জানোই। আমার মনে হয় এই ছোট্ট মানুষটির একটু বিশেষ যত্ন দরকার।
অবশ্যই, মা জবাব দিলো।

মেরী আর জনও তাতে একমত। রাতের ক্রুদের সম্বন্ধে বাবাকে আগেও অভিযোগ করতে শুনেছে তারা। রাতের পুষ্টিকারকদের কাজ তাদেরই দেয়া হয়, যাদের এ ব্যাপারে আগ্রহ অথবা দক্ষতা কম। যাদের কাজগুলো দিনের বেলার কর্মীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেশিরভাগ রাতের কর্মীদের এমনকি কোনো স্ত্রীও দেয়া হয়না। কোনো কারণে সমাজের অন্যদের সাথে ভাবের আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা তাদের থাকে না। পরিবার তৈরি করতে হলে এই ক্ষমতা থাকা জরুরি।

মেরী নিষ্পাপ চেহারা করে খুব মিষ্টি সুরে বলল, হয়তো আমরা তাকে রেখেও দিতে পারি।   সবাই মুচকি হাসলো। কারণ জানে যে  মেরীর এই নিষ্পাপ ভঙ্গিটা বানানো।

মেরী, মা মনে করিয়ে দিল, নিয়মগুলো তুমি জানো, তাই না?
প্রতিটি পরিবারে থাকবে দুজন শিশু- একটি ছেলে, একটি মেয়ে । সেটাই নিয়ম। নিয়ম বইতে পরিস্কার লেখা আছে।

মেরী দুষ্টুমির সুরে বলল, হুম্ আশা করছিলাম  এক্ষেত্রে হয়তো নিয়মের ব্যাতিক্রম ঘটতে পারে।

এবার মা তার সান্ধ্য অনুভূতির কথা বলা শুরু করল। সে বিচার বিভাগে কাজ করে। আজ একজন পুরনো আসামিকে আবার আনা হয়েছিল। সে আরেকটি নিয়ম ভেঙেছে। মা ভেবেছিল তার আগের অপরাধে যথেষ্ট শাস্তি হয়েছে। সে হয়তো শুধরে গেছে। তাকে এমনকি নিজের কাজে ও পরিবারের কাছেও ফিরে যেতে দেয়া  হয়েছিল। আজ যখন তাকে দ্বিতীয়বারের মতো আবার আনা হলো, মা যারপরনাই হতাশ। একই সাথে কিছুটা অপরাধবোধ। এই ভেবে যে, অপরাধীকে সে শোধরাতে ব্যর্থ হয়েছে।

তার জন্যে আমার ভয় হচ্ছে, মা স্বীকার করলেন। তোমরাতো জানো তৃতীয় কোনো সুযোগ তাকে দেয়া হবে না। নিয়মে বলা আছে তৃতীয়বার কোনো ভুল হলে তাকে রিলিজ করে দেওয়া হবে।

জন শুনে শিউরে উঠল। সে জানে এরকম একবার ঘটেছে। তাদের গ্রুপেরই এক ছেলে আছে , যার বাবাকে এভাবে রিলিজ দেয়া হয়। কম্যুনিটিতে এ নিয়ে কেউ টু শব্দটিও করেনি। এ ধরনের লজ্জার ব্যাপার নিয়ে কথা বলা যায়না। ভাবাটাইতো কঠিন।

[চলবে]

লেখক: রুবাইয়াৎ, ওয়াশিংটন ডি.সি
আগের পর্বগুলো পড়তে নিচের লিংক দেখুন


বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।