স্বাধীনতার অনেক পরেও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পুরোপুরিভাবে পৌঁছেনি শিশুদের কাছে। তবে শিশুদের এই ইতিহাস জানানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
শুরুর কথা
সেগুনবাগিচার একটি ভাড়া বাড়িতে ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক পরিচয় তুলে ধরতে ২০০৪ সালের ১৮ জুলাই ভ্রাম্যমান জাদুঘরের যাত্রা শুরু করে। পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধার সিপাহী পাড়া হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভ্রাম্যমান জাদুঘরের এই কার্যক্রমের পথচলা শুরু। এপর্যন্তু ৩০টি জেলার ৬২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্কুল নির্বাচন
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে দুই জনের একটি টিম জেলা ও থানা পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে স্কুল নির্বাচন করেন। ভ্রাম্যমান জাদুঘরের বড় গাড়ি নিয়ে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজে যাওয়া যায় প্রাথমিক ভাবে সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচ জনের বিশেষ টিম সরকারী ছুটি বাদে পুরো মাস জেলার উল্লেখ যোগ্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে পুরো কার্যক্রমের ব্যয়ভার বহন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে ১৬ হাজার স্মারক সংগ্রহ করা হয়েছে। এই স্মারকগুলো প্রাচীনকাল, দেশ ভাগ, পাকিস্তান আমল, ৭০ এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ও বিজয় নামে ছয়টি পর্যায়ে ভাগ করে প্রদর্শন করা হয়। ভ্রাম্যমান জাদুঘরের পক্ষ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুরো ইতিহাসকে সংক্ষিপ্ত আকরে তুলে ধরা হয়।
প্রদর্শনীর দিন এ্যাসেম্বেলিতে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মুক্তিযুদ্ধের উপর ধারণা দেওয়া হয়। স্কুলের হল রুম অথবা একটা কাস রুমকে পোস্টার ও প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনের উপযোগি করে প্রস্তুত করা হয়। পাশাপাশি গাড়িতে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত ছোট ও সহজে বহনযোগ্য অস্ত্র ও বিভিন্ন উপকরন। এছাড়া শহীদদের ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ ও স্মৃতি চিহ্ন প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়।
ঢাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভ্রাম্যমান জাদুঘরের পরির্বতে মূল জাদুঘর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। জাদুঘরের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জাদুঘরের গাড়িতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল জাদুঘরে নিয়ে আসার ও জাদুঘর পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে সহজে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র ও মানবিকতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে সেজন্য গাইডেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
ক্ষুদে ইতিহাসবিদের স্বীকৃতি
ভ্রাম্যমান জাদুঘর দেখার পর প্রতেক শিক্ষার্থীকে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখতে অনুরোধ করা হয়। শিক্ষার্থীদের লেখা, ছবি নিয়ে স্কুলে প্রকাশ করা হয় দেয়াল পত্রিকা । এছাড়া পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত ব্যক্তিদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে সেগুলো লিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জমা দিতে বলা হয়। যারা লেখা পাঠাবে তাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে একটা স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হয়।
প্রতিটি লেখা নামসহ পুস্তিকা আকারে প্রকাশ এবং দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা নিয়ে আর্কাইভও তৈরি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পরও তাই যে কেউ জাদুঘরে গিয়ে তার লেখা দেখতে পাবে। যেসব লেখা মানসম্পন্ন সেগুলো পত্রিকায় প্রকাশ এবং বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়ে ছিল সকলের মিলিত চেষ্টায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধান ও রক্ষার কাজও তেমনিভাবে সকলকে নিয়ে করতে হবে। যারা ভবিষতের নাগরিক তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভ্রাম্যমান জাদুঘর খুলে দিয়েছে ইতিহাসের এই অনন্ত দুয়ার।
ছোট বন্ধুরা তোমারও তাই সময় নষ্ট না করে প্রস্তুত হও ইতিহাসের অংশ হবার।