ইঁদুররা এবার একজোট হয়েছে। সবার একই কথা-বিড়ালের অত্যাচার আর সহ্য করা যায় না।
বিড়ালকে দেখা তো দূরে থাক, বিড়ালের মিঞাউ ডাক শুনলেই সব ইঁদুর ভয়ে দৌঁড়ে পালায়। এ অবস্থায় বিড়ালকে শিক্ষা দেওয়া যায় কেমন করে!
একটা ইঁদুর প্রতিবাদের সুরে বলল, ‘সকলের সঙ্গে পরামর্শ দরকার। আলাপ-আলোচনা করে একটা প্ল্যান করতে হবে। সঠিক প্ল্যান ছাড়া কোনো মিশনেই সাকসেসফুল হওয়া সম্ভব নয়। ’
তা কথাটা একেবারে মন্দ বলেনি। কতকাল ধরে যে বিড়ালরা ইঁদুরদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছে তার কোনো হদিস নেই। এভাবে চলতে থাকলে কোনোদিনও ইদুরদের মুক্তি মিলবে না। তাই দরকার প্রতিবাদ!
‘হ্যাঁ’ অন্য একটা ইঁদুর বলল, ‘তাহলে আমরা সবাই একদিন একত্রে বসি। এব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিই। আর কালক্ষেপন কার ঠিক হবে না। ’
এ কথায় সবাই রাজি হলো। বলল, যা থাকে কপালে। বিড়ালের একদিন কী আমাদের একদিন। ওদের অত্যাচার আর সহ্য করব না। এবার আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নামব। দেখে নিব বিড়ালের নখের কত শক্তি!
যা কথা তাই কাজ। ইঁদুরদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান সাতটা ইঁদুর নির্বাচিত হলো। এই সাতটা ইঁদুরই বিড়ালদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেবে।
অন্য ইঁদুররা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। মনে মনে বলল, যাক বাবা, এবার বহুদিন পরে একটা ফয়সালা হতে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য মহা আনন্দের সংবাদ। এখন থেকে আমরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারব।
একদিন খুব গোপনে সেই সাতটা ইঁদুর মিটিংয়ে বসল। থমথমে মিটিংয়ের আসর।
প্রথম ইঁদুর চড়া গলায় বলল, ‘বিড়াল যখনই ঘাড় মটকাতে আসবে, আমি তখনই ওর সামনের ডান পা খপ করে ধরে ফেলব। ’
দ্বিতীয় ইঁদুর বলল, ‘ইট ইজ ভেরি গুড আইডিয়া! তুই ডান পা ধরলে আমি ধরব বাম পা!’
‘ফাইন! তাহলে আমরা পেছনের দুই পা ধরব’-একইসঙ্গে বলল তৃতীয় ও চতুর্থ।
পঞ্চম বলল, ‘তোরা চারজনে চার পা ধরে ওকে কিছুক্ষণ বেগুনভাজা খেল দেখাবি। যখন একেবারে কাহিল হয়ে বলতে থাকবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি; তখন, আমি ঐ পাজিটার লেজ ধরে মারব হ্যাঁচকা এক টান!
‘আর আমি কী করব জানিসÑ’ উচ্ছ্বসিত ষষ্ঠ হাসতে হাসতে বলল, ‘পেছন সাইড থেকে হারামজাদার মোচ ধরে দেবো পেঁচকি টান!’
সপ্তম ইঁদুরটা বলল, ‘ততক্ষণে বিড়ালের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়ে যাবে। তখন আমি আয়েশ করে দেখব হুলোটাকে। তখনও যদি বেয়াদবের মতো তাকায়, তবে ওর নাক বরাবর আচ্ছামতো বসিয়ে দেব এক ঘুষি!’
প্রথম বলল, ‘তবে হ্যাঁ, কান ধরে যদি তওবা করে বলে, বাকি জীবনে আর আমাদের ঘাড় মটকাবে না, তাহলে ছেড়ে দেব। কী বলিস তোরা?’-প্রথম ইঁদুরের এই কথায় বাকিরা কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় কোত্থেকে যেন একটা কালো বিড়াল মিঞ্চাউ ডাক দিয়ে উদয় হলো।
সঙ্গে সঙ্গ সাতটা ইঁদুর মিটিং রেখে যে যার মতো দিলো ছুট। তখন কোথায় যে গেল বিড়ালকে শায়েস্তা করার প্ল্যান!
ইঁদুরগুলো ছুটে পালানোর পর বিড়ালটা আফসোস করতে লাগল। ইস, সাত সাতটা ইঁদুর ছিল। আর একটু কেয়ারফুল থাকলে কমপক্ষে ২/৩টা ধরা যেত। এমন সুযোগ কী জীবনে সব সময় আসে? ওদিকে বিড়ালছানা খাবারের আশায় পথ চেয়ে বসে আছে। তারা আবার ইঁদুর ছাড়া অন্য কিছু মুখেও তোলে না। তাই বাবা বিড়াল হন্যে হয়ে ইঁদুর খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ নিজের সামান্য গাফলতির জন্য পেয়েও হারাতে হলো এতগুলো ইঁদুর। আরো কতক্ষণ যে তাকে ইঁদুর খুঁজে বেড়াতে হবে কে জানে! ইঁদুর হলো দুনিয়ার বজ্জাতের বজ্জাত। বিড়ালের নাম শুনলেই পাতাল ছেড়ে যেন পালায়! এই যে একবার বিড়ালের দেখা পেলো, আজ সারাটা দিন গর্তে লুকিয়ে থাকবে।
যাহোক পরের দিন আবার সাত ইঁদুর মিটিংয়ে বসল। এবার সবগুলো ইঁদুরের একই কথাÑকাল কেন সবাই ভয়ে পড়িমরি করে পালাল? তারা ছিল সাতজন। আর বিড়াল ছিল একা। প্ল্যান মাফিক বিড়ালটাকে ধরতে পারলে সে কুপোকাত হতো না? একটাকে শায়েস্তা করে দিতে পারলে বাকিগুলোও জাত হয়ে যেত। নিশ্চয় কোথাও একটা গলদ রয়ে যাচ্ছে।
সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। ষষ্ঠ, মানে যে কি-না বিড়ালের মোচ ধরে পেঁচকি টান দেওয়ার কথা বলেছিল, সে হঠাৎ করে বলে উঠল, ‘পেয়ে গেছি!’
সবাই উৎসুক হলো, ‘কী পেয়েছিস? আমাদের প্ল্যানে একটা খুঁত আছে। ’
সবাই বলল, ‘খুঁত?’
ষষ্ঠ বলল, ‘হ্যাঁ। আরে বাবা, আমরা সবাই বিড়ালের পা ধরবো, লেজ ধরব, মোচ ধরব, ঘুষি মারব, বেগুনভাজা করবÑসব ঠিক আছে। কিন্তু বিড়ালের মিঞাউ ধরবে কে?’