ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

শুভ হোক তোমার জন্মদিন

মীম নোশিন নাওয়াল খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৩
শুভ হোক তোমার জন্মদিন

নেলসন ম্যান্ডেলা। যাঁর নাম শুনলে মনে জাগ্রত হয় অসীম সাহস, বাধাকে অতিক্রম করার শক্তি, মানুষকে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে স্থান দেওয়ার অনুপ্রেরণা।

আফ্রিকান এই বর্ণবাদবিরোধী নেতা আমাদের শিখিয়েছেন সাহসী হতে। শিখিয়েছেন বর্ণের ভেদ ভুলে সবাইকে একত্রিত হয়ে বিশ্বকে জয় করতে।
 
ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের রাজধানী উমতাতার নিকটবর্তী মভেজো গ্রামে। আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় তাঁর জন্ম হয়। পিতা গাদলা হেনরি মপাকানইসা এবং মাতা নেসোকেনি ফ্যানি।

ম্যান্ডেলার ছোটবেলা কাটে তাঁর নানাবাড়িতে। ডাকনাম ছিল রোলিহ্লাহ্লা। পারিবারিক নাম মাদিবা। ম্যান্ডেলা ছিলেন তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়েছেন। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর এক শিক্ষিকা ইংরেজিতে তাঁর নাম রাখেন নেলসন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৪৮ সালের নির্বাচনে ন্যাশনাল পার্টি নামক আফ্রিকনাদের দল জয়লাভ করে। তারা ছিল বর্ণবাদী। ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার পরই ম্যান্ডেলা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

১৯৬১ সালে ম্যান্ডেলা এএনসির সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ে (সংক্ষেপে এমকে) -এর নেতৃত্ব নেন। তিনি এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা  করেন। প্রয়োজনে গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনাও করেন ম্যান্ডেলা।   ১৯৮০’র দশকে এমকে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করে। সে যুদ্ধে মারা যায় অনেক বেসামরিক লোক। পরবর্তীতে সেকথা স্বীকার করেন ম্যান্ডেলা।
 
১৯৬২ সালে নেলসন ম্যান্ডেলাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা সহ নানা অপরাধে গ্রেফতার করে। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাসের ১৮ বছর কাটে রবেন দ্বীপের কারাগারে। ১৯৮৮ সালে তাঁকে ভিক্টর ভার্স্টার কারাগারে নেওয়া হয়। মুক্তির আগ পর্যন্ত পরবর্তী সময়টুকু তিনি ছিলেন এখানেই। কারাবাসে থাকাকালীন বিশ্বব্যাপী ম্যান্ডেলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং তিনি আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণবাদবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ম্যান্ডেলার দীর্ঘ কারাবাসের অবসান ঘটে।

মুক্ত হওয়ার পর নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই দলের নেতা ছিলেন তিনি। সে সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। এই শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯১ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে ম্যান্ডেলাকে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় অবদান রাখার জন্য ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ম্যান্ডেলা। এছাড়াও শাখারভ পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি।

বর্তমানে ৯৫ বছরে পা রাখা ম্যান্ডেলা প্রিটোরিয়ার মেডিক্লিনিক হার্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত এই নেতার আজ ৯৫তম জন্মদিন। ২০০৯ সাল থেকে জাতিসংঘের ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে এই দিনটি ম্যান্ডেলা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষকে আজ ম্যান্ডেলা দিবস পালনের অংশ হিসেবে ৬৭ মিনিট ভালো কাজে ব্যয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এবারের ম্যান্ডেলা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পদক্ষেপ নাও, পরিবর্তন আনো, প্রতিটি দিনকে ম্যান্ডেলা দিবসে পরিণত করো’।

ম্যান্ডেলার জন্মদিনে আজ তাই আবারো আমরা স্মরণ করতে পারি ২৫ বছর আগে কবি সেজান মাহমুদের লেখা ও গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের গাওয়া ব্যাপক জনপ্রিয় সেই গানটি:

কালো কালো মানুষের দেশে
ওই কালো মাটিতে
রক্তের স্রোতের শামিল
নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি
অমর কবিতার অন্ত্যমিল
শুভ হোক তোমার জন্মদিন
শুভ হোক তোমার জন্মদিন।  



বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।