ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা

ইমরুল ইউসুফ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৩
হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ এই ছয় বছর ধরে পৃথিবীতে বড় একটি যুদ্ধ হয়েছিল। এত বড় যুদ্ধ এরপর আর হয়নি।

যুদ্ধটির নাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বের কয়েকটি দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এরপর পৃথিবীর অনেক দেশে যুদ্ধ হয়েছে, যুদ্ধ এখনো হচ্ছে।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা পরের কোনো যুদ্ধ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। এজন্য ওই যুদ্ধের কথা মানুষ এখনো মনে রেখেছে। বিশেষ করে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি নামের দুটি শহরে দুই দিন বোমা হামলার কথা সবাই মনে রেখেছে। কারণ ওই বোমা হামলায় ৩/৪ দিনের মধ্যে মারা গিয়েছিল ২ লাখেরও বেশি মানুষ।

বোমা হামলার ওই দিনের কথা মানুষ এখনো স্মরণ করে। তাদের স্মরণেই প্রতিবছর ৬ আগস্ট হিরোশিমা দিবস এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকি দিবস পালিত হয়। জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও দিবস দুটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। এখন আমরা সংক্ষেপে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে বোমা হামলার ঘটনা এবং বোমা সম্পর্কে জানব।

হিরোশিমার ঘটনা
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। ঘড়িতে তখন সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। আমেরিকা থেকে উড়ে জাপানের হিরোশিমা শহরে এলো বি-২৯ সুপারফোর্টেস নামের একটি বিমান। বিমানের মধ্যে ছিল খুবই শক্তিশালী একটি বোমা।

বোমাটির নাম লিটল বয়। এটি ছিল একটি আণবিক বা অ্যাটম বোমা। হঠাৎ লিটল বয় হিরোশিমার আকাশে বিস্ফোরিত হলো। মুহূর্তেই গোটা শহরজুড়ে তৈরি হলো নীল, সাদা রঙের আলো। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুতে আগুন ধরে গেল। বিস্ফোরণের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে যা যা ছিল সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। হাজার হাজার মানুষ পুড়ে মিশে গেল মাটির সঙ্গে।

যারা কিছুটা দূরে ছিল তাদের কষ্ট ছিল আরো বেশি। কারণ কারো শরীরের মাংস উঠে গেল। কারো হাত পা উড়ে গেল। কারো চোখ অন্ধ হয়ে গেল। সবাই মিজু মিজু বা পানি পানি বলে চিৎকার করতে লাগল। কিন্তু কোথাও এতটুকু পানি পেল না। পানি দেওয়ারও কেউ ছিল না সেখানে। বোমার আগুনের তাপে মানুষের শরীর পানিশূন্য হয়ে গেল। ৪৮ হাজার বড় বড় বাড়ি পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। মাটির নিচের আলু পর্যন্ত পুড়ে সিদ্ধ হয়ে গেল। হিচিয়ামা নামক নদীর পানি হয়ে গেল গরম। এমনই ভয়াবহ ছিল সেই অ্যাটম বোমা।

এই বোমার আঘাতে মারা গিয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। আর আহত ২ লাখ মানুষ চিরদিনের জন্য হয়ে গিয়েছিল পঙ্গু। এখন চট করে জেনে নিই লিটল বয় সম্পর্কে।

লিটল বয়ের তেজস্ক্রিয় পরমাণু : ইউরেনিয়াম-২৩৫

ওজন : চার হাজার কেজি, দৈর্ঘ্য : ৯.৮৪ ফুট, পরিধি : ২৮ ইঞ্চি
বহনকারী বিমানের নাম : বি-২৯ সুপারফোর্টেস
পাইলটের নাম : কর্নেল পল টিবেটস
বোমা পতনে সময় লাগে : ৫৭ সেকেন্ড
মূল আঘাত : শিমা সার্জিক্যাল ক্লিনিক
বিস্ফোরণের মাত্রা : ১৩ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য।

উল্লেখ্য, হিরোশিমা শহরটির আয়তন ২৫৩ বর্গমাইল বা ৬৫৬ বর্গকিলোমিটার। ওসাকা থেকে এটি ১৭৫ মাইল বা ২৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এর দক্ষিণ-পূর্বদিকে রয়েছে জাপানের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় কুরে। বোমায় বিধ্বস্ত হিরোশিমাকে ১৯৫০ সাল থেকে আবার নতুন করে গড়ে তোলা হয়। হিরোশিমা এখন জাপানের অন্যতম প্রধান শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু তাই নয়, যেস্থানে লিটল বয় বিস্ফোরিত হয়েছিল সেখানে নির্মিত হয়েছে পিস মেমোরিয়াল পার্ক। ১৯৫৫ সাল থেকে এখানে পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী একটি বার্ষিক বিশ্বসম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

নাগাসাকির ঘটনা
তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রুমান। তিনি শুধু হিরোশিমা শহর ধ্বংস করে খুশি হলেন না। জাপানের আরেকটি শহর নাগাসাকি শহরও তিনি ধ্বংস করতে চাইলেন। ট্রুমানের নির্দেশেই মাত্র ২ দিন পর অর্থাৎ ৯ আগস্ট বি-২৯ বক্সকার নামের একটি জঙ্গি বিমান নাগাসাকিতে উড়ে এলো। ওই বিমানে ফ্যাটম্যান নামে শক্তিশালী একটি বোমা ছিল। ফ্যাটম্যানের ধ্বংস ক্ষমতা ছিল লিটল বয়ের চেয়ে কিছুটা কম। ওই দিন বেলা ১২টা ২ মিনিটে ফ্যাটম্যান নাগাসাকির আকাশে বিস্ফোরিত হলো।

শহরের ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ। পরের সব ঘটনা হিরোশিমা শহরের মতোই ভয়াবহ এবং কষ্টের। ওই দিন মিৎসুবিশি জাহাজ নির্মাণঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে। কিন্তু বোমাটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় এবং এর আঘাতে নাগাসাকির প্রায় অর্ধেক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এখন চট করে ফ্যাট ম্যান সম্পর্কে জেনে নিই।

ফ্যাট ম্যানের তেজস্ক্রিয় পরমাণু : প্লুটোনিয়াম-২৩৯
ওজন : চার হাজার ৬৩০ কেজি, দৈর্ঘ্য : ১০.৬ ফুট, পরিধি : ৩৬ ইঞ্চি
বহনকারী বিমানের নাম : বি-২৯ বক্সকার
পাইলটের নাম : মেজর চার্লস ডব্লু সুইনি
বোমা পতনে সময় লাগে : ৪৩ সেকেন্ড
মূল আঘাত : মিৎসুবিশি স্টিল ও অস্ত্র কারখানা এবং মিৎসুবিশি-উরাকামি সমরাস্ত্র কারখানার মাঝে
বিস্ফোরণের মাত্রা : ২১ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য।

উল্লেখ্য, শহরটি জাপানের রাজধানী টোকিও শহর থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পূর্ব চীন সাগরের তীরে কিউশুর পশ্চিম সৈকতে এই নগরী অবস্থিত। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিহতদের স্মরণে সেখানে একটি শান্তি উদ্যান নির্মিত হয়েছে।

এই দুই বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে পরবর্তীতে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মারা যান আরো ২ লাখ ১৪ হাজার মানুষ। আর বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হিরোশিমায় ২ লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ মানুষ। এজন্য আমরা কখনোই যুদ্ধ চাই না। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন মৃত্যুর শহর দেখতে চাই না। এমন ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ দেখতে চাই না। পৃথিবীর দেশে দেশে এখনো যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ মানেই মৃত্যু। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর কষ্ট। একারণে আমাদের সবাইকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই শান্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৩
এএ/জেসিকে-ichchheghuri@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।