ঢাকা: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের শিশুতোষ পাতা ইচ্ছেঘুড়ির নিউজরুম এডিটর মীম নোশিন নাওয়াল খান দ্বিতীয়বারের মতো জিতে নিলেন মীনা অ্যাওয়ার্ড।
ইউনিসেফ ২০০৫ সাল থেকে ক্রিয়েটিভ ও জার্নালিস্টিক দুই ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।
এবার ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের ৯ম আসর। শিশু-কিশোরদের শিক্ষামূলক এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র মীনার ২১তম জন্মদিনে এ পুরস্কার দেওয়া হলো।
আন্ডার এইটিন ক্রিয়েটিভ শাখায় তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বারে মতো পুরস্কার পেলেন মীম।
মঙ্গলবার বিকেল চারটায় রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলের বলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত চিত্রনায়িকা মৌসুমী এবং ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলেনোভ।
সুবিধাবঞ্চিত পরিবার থেকে আসা শিশুরা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত ড্রপ-ইন সেন্টারে বসবাসরত শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
এরপর শুরু হয় পুরস্কার ঘোষণার পালা। মূলত সৃজনশীল ও সাংবাদিকতা এই দুই শ্রেণীতে প্রিন্ট, টেলিভিশন ও রেডিও মাধ্যসেমর মধ্য থেকে নির্দিষ্ট বয়সসীমার ভিত্তিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
সৃজনশীল লেখক, প্রবীণ সাংবাদিক, অডিও ভিস্যুয়াল বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে আট সদস্য বিশিষ্ট বিচারকমণ্ডলীর একটি প্যানেল জুরি হিসেবে কাজ করেন। এবার প্যানেলে ছিলেন, সেলিনা হোসেন, ফরিদ হোসেন, রোবায়েত ফেরদৌস, ফাহমিদুল হক, জাকির হোসেন রাজু, সামিয়া জামান, রতন পাল এবং কাদির কল্লোল।
প্রিন্ট মিডিয়া ক্রিয়েটিভ ওভার এইটিন শাখায় রোকেয়া খাতুন রুবি ১ম, আহমেদ রিয়াজ ২য় ও কাজী সাজিদুল আহসান ৩য় পুরস্কার পান।
প্রিন্ট মিডিয়া রিপোর্টিং আন্ডার এইটিন শাখায় রাবেয়া বশরি অনিতা ১ম, তাহসিন উদ্দীন ২য় ও জামিল আশরাফ খান নয়ন ৩য় পুরস্কার পান। এ শাখায় ওভার এইটিনে রিতা ভৌমিক ১ম, শেখ সাবিহা আলম ২য় ও মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী পান ৩য় পুরস্কার।
ব্রডকাস্ট মিডিয়া ক্রিয়েটিভে আন্ডার এইটিন শাখায় চ্যানেল আইয়ের সাদমান করিম ও শেখ রিফাত দায়ান ১ম, এটিএন বাংলার মনির হাসান তপু ২য় ও বৈশাখী টিভির জামিল আশরাফ খান নয়ন তয় পুরস্কার পান। এ শাখায় ওভার এইটিনে দেশ টিভির সুমনা সিদ্দিক ও বিটিভির ড. মো. শাখাওয়াত উল্লাহ চৌধুরী ১ম, এসএ টিভির খন্দকার শাহাদাত হোসাইন ২য় এবং এটিএন বাংলার রাবেয়া আক্তার সুবর্ণা পান ৩য় পুরস্কার।
ব্রডকাস্ট মিডিয়া টেলিভিশন রিপোর্ট আন্ডার এইটিন শাখায় ইটিভির সুস্মিতা সেন ১ম, একই টিভির সিফাত আল আমিন ২য় ও দিগন্ত টিভির আব্দুল হাদি আল হিলালী ৩য় পুরস্কার পান। এ শাখায় ওভার এইটিনে এসএ টিভির আহাদ হোসাইন ও আরটিভির আতিকা রহমান ১ম, ইটিভির মো. শাখাওয়াত হোসাইন ২য় এবং এনটিভির মুহাম্মদ মুকসিমুল আহসান পান ৩য় পুরস্কার।
ব্রডকাস্ট মিডিয়া রেডিও ক্রিয়েটিভ ও রিপোর্টিং দুটি শাখায়ই ওভার এইটিন। ক্রিয়েটিভে এবিসি রেডিওর গোলাম কিবরিয়া সরকার ১ম, রেডিও পল্লিকণ্ঠের মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ২য় ও বাংলাদেশ বেতারের মো. মুস্তাফিজুর রহমান ৩য় পুরস্কার পান।
রিপোর্টিং শাখায় এবিসি রেডিওর শাহনাজ শারমীন, রেডিও টুডের শাকিল মাহমুদ ২য় এবং একই রেডিওর মো. মাহবুবুর রহমান পান ৩য় পুরস্কার।
এসময় পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রধান প্যাসকেল ভিলনোভ বলেন, আমি সাংবাদিকতা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের মতামত তুলে ধরার কাজে আপনাদের প্রচেষ্টা এবং চলমান উদ্যোগকে প্রশংসা করি। গণমাধ্যমে শিশু অধিকারের বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা মীনা অ্যাওয়ার্ডের মূল চেতনা।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মীনা পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক-ইউনিসেফ এভাবেই দাঁড় করিয়েছে। মীনা কীভাবে নিজে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং অন্যদের পরিবর্তন করছে সেটা দেখানো সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যতম বিচারক কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, মীনা অ্যাওয়ার্ডের জন্য এদেশের শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে সৃজনশীলতার বৈচিত্র্য বাড়ছে।
মীমের পাওয়া পুরস্কার
২০১০ সালে মীম পেয়েছিলেন প্রিন্ট মিডিয়া সৃজনশীল অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে প্রথম পুরস্কার। এবার এ শাখায় ৫টি মনোনয়নের মধ্যে দুটি ছিল মীমের।
এর মধ্যে মাসিক শিশু পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পতাকাওয়ালা’ গল্পের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কার পেলেন মীম। পুরস্কার হিসেবে মীম পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা, একটি সম্মাননা পদক এবং সনদ। এ শাখায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন সুমাইয়া বরকতুল্লাহ এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সুমনা আক্তার।
মীমের লেখালেখি
বেড়ে ওঠাটা ঢাকায় হলেও মীমের শেকড় ফরিদপুর জেলা শহর। সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা ফরিদপুর বার্তায় ছাপা হয় প্রথম ছড়া। লেখালেখির হাতেখড়ি সেখানেই।
এরই মধ্যে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মীমের ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম বই ‘কণকচাঁপা’ (ছড়া) প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। তৃতীয় শেণীর ছাত্রী তখন মীম। এ বইয়ের মাধ্যমেই দেশের কনিষ্ঠতম গ্রন্থলেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার।
প্রথম গল্প ‘বুকের ভিতর স্বপ্ন’ দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াকালে লেখা। সবুজ পাতায় ছাপা হয়েছিল পরের বছর। তার এক বছর পরই মীনা অ্যাওয়ার্ডে প্রিন্ট মিডিয়া ক্রিয়েটিভ আন্ডার এইটিন প্রথম পুরস্কার অর্জন। দ্বিতীয় গল্প ‘নানুর একটা জগত আছে’ ঐতিহ্য গোল্লাছুট গল্প লেখা প্রতিযোগিতা ২০০৯-এ অন্যতম সেরা।
দৈনিক যায়যায়দিন, প্রথম আলো, আলোকিত বাংলাদেশ, মাসিক শিশু, নবারুণ ও সবুজ পাতাসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় মীমের লেখা।
লেখালেখি ছাড়াও ছবি আঁকা, গ্লাস পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি ও বিভিন্ন রকম হ্যান্ডমেইড কাজেও পারদর্শী মীম।
মীমের বইগুলো
দ্বিতীয় বই স্বপ্নপুরী (ছড়া) ২০১০ সালে, ৩য় বই বুকের ভিতর স্বপ্ন (গল্প) ২০১১ সালে, ৪র্থ বই রূপার নূপুর (গল্প) ২০১২ সালে এবং ৫ম বই একজন ক্লাস ক্যাপ্টেনের ডায়রি (কিশোর উপন্যাস) ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়।
বাংলানিউজে মীম
বাংলানিউজের সঙ্গে মীমের পথচলা শুরু এ বছরের মার্চ মাস থেকে। তার অসাধারণ লেখনীতে মুগ্ধ হয়ে বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন গত জুলাই মাসে তাকে সর্বকনিষ্ঠ নিউজরুম এডিটর হিসেবে নিয়োগ দেন।
মীমের স্বপ্ন ও পরিবার
আরেকটু বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চান মীম। সর্বকনিষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জিতে নিতে চান নোবেল। পাশাপাশি চালিয়ে যেতে চান লেখালিখিও।
পুরস্কার প্রাপ্তির পর মীম বলেন, খুব ভালো লাগছে। ছোটদের জন্য কাজ করতে পারাটা সবসময়ই আনন্দের। সে কাজের স্বীকৃতি পাওয়াটা নিঃসন্দেহে আরো আনন্দের।
মীমের বাবা আবদুল মোনেম খান ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্তব্যরত। মা হোসনে আরা রশিদ ঘরে থেকেই মীমের বেড়ে ওঠার দেখভাল করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৩
এএ/টিকে/এএসআর