ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

কন্যা তুমিই পারো বদলে দিতে

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৩
কন্যা তুমিই পারো বদলে দিতে

মেয়েটির নাম রিতু। ছোট্ট একটা গ্রামে থাকে বাবা-মা আর ছোট ভাই দুটোর সাথে।

সে স্কুলে যায় না। তার বাবা- মা বলেন, মেয়েদের তো বড় হলেই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। সংসার করবে। পরের বাড়ি চলে যাবে। তাদের খামোখা পড়িয়ে কী লাভ? তারা তো আর বাবা-মাকে উপার্জন করে খাওয়াবে না।

রিতুকে বাবা-মা মাঠে খেলতেও যেতে দেন না। মেয়েদের নাকী ছেলেদের মতো বাইরে বাইরে ঘুরতে নেই। রিতু বাড়ির আঙিনার ভেতরেই পুতুল নিয়ে খেলে।

তবে তার ভাই দুটি স্কুলে যায়। মাঠে খেলতে যায়, পাড়ায়-মহল্লায় ছুটে বেড়ায়।

রিতুর প্রথম প্রথম মন খারাপ হলেও এখন সে ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে। তার মনে হয়, এটাই হয়তো হওয়ার কথা।

আর একই গ্রামে রিতুদের পাশের বাড়িতেই থাকে সীমা। সীমা তার বড় ভাইয়ার সাথে রোজ স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে ভাইয়ার সাথে মাঠে খেলতে যায়। বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। গাছে ওঠে, নদীতে সাঁতার কাটে। তার বাবা-মায়ের মতে ছেলে সন্তান আর মেয়ে সন্তানের সমান অধিকার রয়েছে। তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত না।

হ্যাঁ, আমাদের দেশের ব্যাপারটা এমনই। কেউ কেউ কন্যা শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলেও অধিকাংশ মানুষেরই এখনো কন্যাশিশুদের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান নেই। থাকলেও তা প্রয়োগ করার ব্যাপারে কারো চিন্তা নেই। সব ক্ষেত্রেই তাই আজও আমাদের মেয়েরা হচ্ছে অবহেলিত, বঞ্চিত। তবু কেউ কেউ সচেতন হচ্ছেন, অন্যদের সচেতন করছেন।

আর কন্যাশিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই প্রতি বছর পালিত হয় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। আজ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘কন্যা মানেই বোঝা নয়, করবে তারা বিশ্ব জয়। ’

সত্যিই কন্যাশিশুরা আমাদের বোঝা নয়। সঠিকভাবে তাদের গড়ে তুললে তারা দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। কন্যাশিশুদের শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। রিতুর মতো আমাদের কোনো শিশুকে যেন মেয়ে বলে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হতে হয়। কোনো শিশুকে যেন মেয়ে হওয়াকে অপরাধ বলে ভাবতে না হয়।

কন্যাশিশুরাও অন্যদের মতোই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু তাদেরকে দিতে হবে। প্রতিটি বাবা-মাকে হতে হবে সীমার বাবা-মায়ের মতোই কন্যার অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আর সচেতন করতে হবে রিতুর মা-বাবার মতো অসচেতন বাবা-মায়েদের।

সবাই সচেতন হয়ে এগিয়ে এলেই কন্যাশিশুরা সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে। নিজেকে সমাজের বা পরিবারের বোঝা নয়, বরং সম্পদ বলে ভাবতে শিখবে। আর শুধু তারাই নয়, প্রতিটা মানুষকেই কন্যাশিশুদের পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ বলে বিবেচনা করতে হবে।

ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাওয়া নয়, সকল বাধা পেরিয়ে বিশ্ব জয় করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে আমাদের কন্যাদের মাঝে। আমাদের কন্যাশিশুরাও পারে বিশ্ব জয় করতে, তারাও পারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে। অনেক আগে থেকেই বিইভন্ন ক্ষেত্রে তা প্রমাণ করেছে অনেকেই।

আজ তাই আবারো বলছি, ভয় পেয়ো না। কন্যা তুমি এগিয়ে যাও। তুমিই পারো বদলে দিতে, তুমিই পারো বদলে দিতে এই পৃথিবী।     

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৩
এএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।